গত দুই মাস খুব অস্থির ছটফটে সময় কাটছে। কোন কিছুতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারছি না! যখনই কোন না কোন ছেলেমেয়েদের হতাহতের খবর দেখছি, কোন না কোন লুটপাটের ঘটনা দেখছি এবং মন্ত্রী আমলাদের দুর্নীতির চিত্রগুলো দেখতে পাচ্ছি , দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র হতে দেখছি, তখনই মানসিক শান্তি গুলো সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারদিকে এত এত অন্যায়, রাহাজানি, বন্যায় বিধ্বস্ত মানুষের কষ্ট….. এর মাঝে নিজের ভালো থাকা, পড়াশোনা, ঘুরে বেড়ানো এসব কোন কিছুই কাজ করছে না এখন।
শান্ত হয়ে আসা মন আবারও অশান্ত হয়ে ওঠে নিত্যনতুন কোন না কোন ঘটনায়।
প্রতিদিনকার ছক বাধা রুটিনে কাজ করে যাই শুধু।
নিত্যদিন কার কাজের মধ্যে টের পেলাম আমার এক ছাত্রী নিয়মিত কলেজে আসছে না। পরীক্ষার ফলাফলও বেশ খারাপ। জিজ্ঞাসা করলাম ঘটনা কি।
জানতে পারলাম, তার মা-বাবা সেপারেশনে আছে। বড় ভাই ছোটবেলা থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে বাপের মাধ্যমে। অকারণ মারধর, অপমান নিত্য দিনকার বিষয় ছিল। যখনই সুযোগ পেয়েছে দেশের বাইরে চলে গেছে,এখন আর পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ রাখে না। আর ওরা মা – মেয়ে ঢাকায় একা থাকে।
জানতে চাইলাম কি ধরনের সমস্যার কারণে পারিবারিক অশান্তি? জানালো তার বাবা বড়লোকের বখাটে সন্তান। এইচএসসিও পাশ করতে পারেনি। তার মা যখন ইউনিভার্সিটি পড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা এসেছে তখন তার বাবার চোখে পড়ে। (ছাত্রীকে দেখে বুঝতে পারি তার মা বেশ সুন্দর মানুষ!)অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে এসে তার মাকে বিয়ে করে। সব সময় নেশাখোর এবং বহুগামী ছিল লোকটা। বিয়ের পরেও পরিবর্তন হয়নি।( বাংলা সিনেমার মতো যেন ঘটনা। ওদের ভবিষ্যৎ বাংলা সিনেমার মতো সুন্দর হলেই হয়!)
এ লোক তার মাকে সব সময় নির্যাতন করেছে। এবং বড় ভাইকে সব সময় ভারবালি এবিউজ করতো। যখন পিস্তল নিয়ে এসে তার মাকে খুন করতে যায় তখনই ধুমধাম ধিশ হয়ে মা বাবার মধ্যে সেপারেশন হয় । তবে ওই সময় কেউ হতাহত হয়নি। জিজ্ঞাসা করলাম, পিস্তলধারি মানুষ, পয়সাওয়ালা, সাথে নারী লোভী এবং নেশা শক্ত!! কারণ কি?
উত্তর কি ছিল জানেন?
ওই ব্যাটা আওয়ামী লীগ নেতা!!
পুরাই নাইস এন্ড অ্যাট্রাক্টিভ!!
আজ আর এক ছাত্র জিজ্ঞাসা করছিল , মিস- আমাদের খাতা দেখা কি শেষ হয়েছে ?কেমন নাম্বার পেয়েছি? জানালাম আর অল্প কয়েকটা বাকি দুই-একদিনের মধ্যে খাতা দেখাবো। সবাই মোটামুটি ভালো নাম্বার পেয়েছে! তখন তার বন্ধু একজনের নাম বলল সে না জানি কেমন নাম্বার পেয়েছে!! কিছুক্ষণ আগে তার বন্ধুর খাতা দেখার কারণে জানালাম তার ওই বন্ধুটি বেশ ভালই নাম্বার পেয়েছে। ছাত্র জিজ্ঞেস করল মিস আমি কত পেয়েছি? বললাম তোমারটা মনে নাই! জবাবে জানালো তার বন্ধু তো স্পেশাল কিড , এ কারণে তারটা মনে রেখেছি!!!
অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেন তোমার বন্ধু স্পেশাল হবে? জানালো, বন্ধুর বাবা বড় আওয়ামী লীগ নেতা! হেসে বললাম, তাহলে তো এখন লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই! অবশ্য লোক খারাপ যদি না হয় তাহলে লুকিয়ে থাকার কিছু নাই। ছাত্রটি জানালো, না মিস। ওর বাপ আসলেই লুকিয়ে আছে। আন্দোলনের সময় ওর বাবা ছাত্রদের উপরে গুলি করেছে
তাজ্জব হয়ে প্রশ্ন করলাম, নিজের এই বয়সী সন্তান আছে, তারপরও ওই লোকটা গুলি করতে পারল!! ছাত্র জানানো মিস, নেত্রীর নির্দেশে গুলি করেছে নাকি! আমার বাবাও এ নির্দেশ পেয়েছে। কিন্তু তিনি গুলি করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে! আমার বাবা ও লীগের নেতা । দিনের বেলা ঘর থেকে বের হতে পারে না। রাতের অন্ধকারে বের হয় বাসা থেকে!!(সে জানিয়েছে তার বাবা সহ সে সারারাত বাহিরে ছিল! ভোর পাঁচটায় তারা বাসায় ফিরেছে) রাতভর কি কাজটা করেছে, সেটা জিজ্ঞাসা করার আর রুচি হল না!!
তাহলে নেত্রীর নির্দেশ পেলে যাকে তাকে মেরে ফেলা খুব সহজ একটা কাজ।
জেনে রাখো বাংলাদেশ, খুনি ডাইনিকে যারা সাপোর্ট করছে, এরা প্রত্যেকে এক একজন পোটেনশিয়াল খুনি!!
অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতে এই খুনিদের বিচার হবে!