খুশি মনে কোরবানি

ছোটবেলায় কোরবানি ঈদের সময় আব্বুকে দেখতাম ঈদের আগের দিন দাদুর বাড়িতে চলে যেতো। ঈদের দিন কোরবান শেষে সন্ধ্যা বা রাতে গোশত নিয়ে ফিরে আসতো। তখন আমাদের গরু দাদার বাড়িতে কোরবান দেয়া হতো। নিজেদের গরু দেখতে পেতাম না। তাই প্রতিবেশীদের কেনা গরু দেখেই আমরা আনন্দ নিতাম। আমাদের গরু নাই কেন , এই টাইপের দুঃখবোধ এ আক্রান্ত হইনি কখনো। ঈদের দিন সকালে প্রতিবেশীদের কারো না কারো বাসা থেকে হয়তো গোস্ত চলে আসতো। আর আমাদের গোস্ত আসতো রাতে। সেই আমাদের বাসায় এখন এক গরু কোরবানি দেয়া হয়।

পরিচিত একজনের কাছে তাদের ছোটোবেলায় কথা শুনছিলাম। অনেকদিন তাদের কোরবান দেয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই ঈদের দিন তারা দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো। তাদের এখন ঈদের দিন নরমাল ফ্রিজ,ডিপ ফ্রিজ ভর্তি হয়ে যায় কোরবানীর গরুর গোশতে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের সামর্থ্যের পরিবর্তন ঘটে।

কোরবানির বিষয় টা পুরোটাই সামর্থ্যের উপর। কারো জন্যই বোঝা নয়। কুরবানী দিতে না পারলে মন খারাপের কিছু নাই বরং সেই দিন অন্যের মেহমান হওয়া যায়। কোরবানি মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা গোস্ত ডিস্ট্রিবিউশন এর মাধ্যমে অনেকের মেহমানদারী করার উপলক্ষ তৈরী করে দিয়েছেন। এতে কারো নিজেকে বড় মনে করার সুযোগ নাই গোস্ত দিতে পারার জন্য, কারো নিজেকে ছোট মনে করার কোনো সুযোগ নাই না দিতে পারার জন্য।

কোরবানির গোশতে এইজন্যই তিনটি ভাগ রাখা হয়েছে। নিজের জন্য , আত্মীয়র জন্য এবং দরিদ্র ও অন্যান্য মানুষদের দেওয়ার জন্য। এই আদান-প্রদানটাই কোরবানির সৌন্দর্য।

গতবছর আমি কোরবান দিতে পারিনি। ঈদের আগে তাই চার- পাঁচ কেজি গরুর গোশত কিনে রেখেছিলাম। খাসির গোশত ও ফ্রিজে ছিল একই পরিমাণে। ঈদে মন খারাপ করার কোন সুযোগই ছিল না। রান্নাবান্না করে পাড়া-প্রতিবেশিদের দিয়েছিলাম। বাসায় অতিথি দাওয়াত করেছিলাম। আমিও দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। আমার তিন বড় আপা (সহকর্মী) কোরবানির গোশত পাঠিয়েছিল আমার জন্য। আর আম্মু গোস্ত রেখে দিয়েছিল।

যেহেতু করোনা কালীন কারণে চট্টগ্রামে পরিবারের কাছে যেতে পারিনি, তাই অন্য রকম ঈদ কাটিয়েছিলাম নিজের সংসারে। কোরবানি না দিতে পারার জন্য ঈদের আনন্দ এতো টুকু নষ্ট করিনি।

এবারো ঈদের আগে আগেই আমরা আর্থিক কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। তাই কোরবানি করা ফরজ ছিলো না। তবুও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে খুশি মনেই কোরবানি করেছি।

সারাবছর ব্যাপক আকারে দান সাদাকা করা হয়না। কোরবানির মাধ্যমে কিছুটা হলেও কাউকে দেয়ার চেষ্টা করা যায়। মনের কার্পন্যতা কাটানো যায়।

আমরা যেনো শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করি। নিজের বড়ত্বের জন্য, সমাজকে দেখানোর জন্য যাতে আমরা এটা না করি। নিজেকে বড় বা ছোট যেন মনে না করি। কোরবানি করাটা যেন আমাদের জন্য বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়।

কোরবানি আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় আমল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কোরবানির ঈদের দিন মানুষের সব নেক আমলের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো কোরবানি করা। কিয়ামতের ময়দানে জবেহকৃত জন্তু তার শিং, লোম, খুরসহ এসে হাজির হবে। নিশ্চয়ই কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা খুশি মনে আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৬)

কোরবানি জাহান্নামের প্রতিবন্ধক। আবদুল্লাহ ইবনে হাসান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি খুশি মনে সওয়াবের আশায় কোরবানি করবে, ওই কোরবানির জবেহকৃত পশু কোরবানিদাতার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে।’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ২৬৭০)