খেলনা ও বাচ্চারা

আমি বানিয়েছি



বাচ্চারা খেলনা দিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করে। তবে কোন খেলনা দিয়ে তারা বেশিক্ষণ খেলতে পারে না । নতুন খেলনা পেলে অল্প কিছু সময় বা দু’চার দিন সেটার আকর্ষণ থাকে।তারপর সেটা নষ্ট করে ফেলে অথবা অবহেলায় পড়ে থাকে। কিন্তু তবুও তারা নতুন নতুন খেলনা পেতে অনেক পছন্দ করে।

আমাদের ছোটবেলায় যখন কেউ বেড়াতে আসত ভাবতাম এই বুঝি খেলনা নিয়ে এলো। হতাশ হয়ে দেখতাম খাবারের জিনিসপত্র এনেছে অথবা জামা কাপড়। একটা পুতুলের বেশ সখ ছিল। কিন্তু সেটা আম্মু ও কিনে দেয়নি, আবার অন্য কাউকে কিনে দিতে নিষেধ করতো। লন্ডন থেকে মিজান ভাইয়া একবার একটা পাপি ডল দিয়েছিল। সাদা একটা কুকুরের বাচ্চা, গায়ে কালো কালো ডট। কি ভীষণ পছন্দের ছিল। কিন্তু একটা পুতুল খুব আশা করতাম।😔

দেশের বাইরে থাকা আত্মীয়রা যখন টি এন্ড টি ফোনে জিজ্ঞাসা করতো, কি লাগবে। কখনোই কিছু বলতে পারতাম না। কারণ আম্মু কটমট করে তাকিয়ে থাকত। কারো কাছে কিছু চাওয়া যাবে না।

একবার পর্তুগাল থেকে জাকির ভাইয়া জিজ্ঞাসা করছিল, কি লাগবে বল। আম্মু পারলে ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু চাইলে খবর আছে। পরে অনবরত জিজ্ঞাসার ফলে বলেছিলাম ক্যালকুলেটর লাগবে। 🙄

তবে আমার জানপ্রাণের বন্ধু নাস Nasreen Sultana আমার এই ফেসিনেশন টের পেয়ে বুড়াকালে একটা টেডি বিয়ার গিফট করেছিল। হল লাইফের একা বিছানার সংগী। এটা আজও যত্ন করে রাখা আছে। বাচ্চারা সহ আমি ও মাঝে সাঝে খেলি।

দেশের বাইরে যে সব আত্মীয়-স্বজন থাকতো তারা বিভিন্ন সময়ে এটা-সেটা উপহার দিত। তবে কখনোই সেগুলো খেলনা ছিল না। একবার এক আত্মীয় তার শ্বশুরবাড়ির এক বাচ্চার জন্য খেলনা এনেছিল। খেলনাটা এনে আমাদের বাসার সোফার নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। কেননা আমার ছোট ভাইটি গাড়ি খেলনা দেখে সে নিতে চাইছিল। সে খুব অস্থির হয়ে খেলনাটা খুজছিল, কিন্তু পাচ্ছিল না। মন খারাপ হয়েছিল তখন। আমাদের বাসায় ও দুটি বাচ্চা (আমার ছোট দুই ভাই বোন) ছিল সেটা সেই আত্মীয়র মনে ছিল না হয়তো।

আমি আর আমার ভাইয়া বিদেশি খেলনা খুব একটা পাইনি। কিন্তু আমার ছোট ভাই বোন অল্পস্বল্প পেয়েছিল মামা-খালু বদৌলতে।(আমাদের সময়ে বিদেশি খেলনার আবেদন অন্যরকম ছিল।) আমরা তাই কাপড় দিয়ে পুতুলের সংসার বানিয়ে আরাম করে খেলতাম। 🥰🥰


মজার বিষয় হলো বাচ্চাদের ছোটবেলায় যে বা যারা যা কিছু দেয় সেটা তারা অল্পস্বল্প হলেও মনে রাখে। আমরা এভাবেই শিখেছি, আমাকে ওমুক তমুক আত্মীয় মনে করে একটা উপহার দিয়েছে।আমরা বুঝে নিয়েছি যে তারা আমাদের ভালোবাসে, তারা দূরে থাকলেও আমাদের কথা মনে করে। ❤️❤️❤️

আমার বাচ্চাদের বড় মামা ও তাদের অনেক খেলনা দিয়েছে। কার্টুন ভর্তি করে খেলনা পাঠিয়েছে বাচ্চাদের জন্য । আর যখন দেশে আসে তখন তো সাথে করেই নিয়ে আসে। এক সাথে বেশি পেলে একসাথে নষ্ট করবে। তাই বেশ কিছু দিন পর পর এক একটি দেয়া হোত। নাওঈদ খেলনা পেলে খুব মনোযোগ দিয়ে ভেঙে চুরমার করে। তাই রিমোট গাড়ি টাইপ খেলনা তার জন্য নিষিদ্ধ ।
তাদেরকেও বারবার বোঝানো হয়েছে কারো কাছে কোন খেলনা , কোনো জিনিস খোঁজা যাবে না। শুধুমাত্র আল্লাহ এবং মা-বাবার কাছে জিনিসপত্র চাওয়া যায়।

তাদের বড় মামা জিজ্ঞাসা করে কি লাগবে তোমাদের? নায়রাহ বলে কিছু লাগবেনা, আমার সব আছে।🥰🥰🥰

নাওঈদ বলে, মামা আমার কিছু লাগবেনা।তবে আমার কেডস টা ছোট হয়ে গেছে এবং আমার গাড়িটা এখন আর চলে না। 😄😄

বাচ্চারা অনেক কিছু চায় , তবে চাওয়ামাত্রই ওদেরকে সবকিছু দেওয়াটা উচিত না। ওদের চাওয়া-পাওয়া তখন অনেক বেশি হয়ে যাবে।তাই চেষ্টা করি একটা মাত্রা বজায় রেখে বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে।

এখন নানা রকমের , নানা ধরনের, নানা বর্ণের অনেক খেলনা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে খেলনা গুলো বেশ আকর্ষণীয় মনে হয় । যতটা না বাচ্চাদের সেগুলো লাগে, আমার মনে হয় মায়েদের এ ধরনের খেলনা গুলো আরো বেশি লাগে। 🤭🤭

বাচ্চারা বেশি দামি কম দামি খেলনার পার্থক্য বুঝতে পারেনা। 1 to 99 থেকে এক প্যাকেট খেলনা কিনলে অনায়াসে দু চার মাস সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে তারা।

তাই বাচ্চাদের খুশি রাখতে তাদেরকে খেলনা দিন , তাদের সাথে খেলনা দিয়ে খেলুন । তাদের সাথে নিজেরাও খেলে এই আনন্দের অংশীদার হোন। 🙂

হ্যাপী প্যারেন্টিং ।

(ঘরে বানানো প্লে ডো। বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করার সময় বাচ্চারা আরাম পায় নি। নষ্ট করে ফেলেছিল দ্রুত। এখন অনায়াসে তারা সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন জিনিস পত্র বানাচ্ছে, আনন্দ করছে। আপাতত সপ্তাহ-দশ দিন তারা এই প্লে ডো নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।)

নাওঈদ বানিয়েছে
নায়রাহ বানিয়েছে