রান্না ঘরের সিন্ক ভর্তি আধোয়া থালা-বাসন, পাতিল পড়ে আছে । বারান্দায় বালতি ভর্তি ধোয়া কাপড় । তারে মেলে দেয়ার মত সময় পাচ্ছিনা , এলার্জি ও পাচ্ছি না। বারান্দার শুকনো কাপড় গুলো এনে আবার গুছিয়ে রাখতে হবে। ঘরটা তিন চারদিন ধরে মোছা হয়নি। রান্না খাবারের কাজ করে, বাচ্চাদের পিছু দৌড়িয়ে হাত পা ব্যথা হয়ে থাকে। শরীরটা যেন আর চলতে চায় না!!
বিকালে বড় দুজন খেলতে নিচে নেমে যায়। ছোটজন ঘুম ভেঙে টের পায়, বাসায় কোন শব্দ নাই। তারমানে ওকেও এখন বাইরে যেতে হবে। তখন সে কাঁদতে থাকে, কাঁদতে থাকে। বাধ্য হয়ে তাঁকে নিয়ে নিচে নামতে হয়। মাঠ ঘাট ঘুরে আসি তাকে নিয়ে।
সন্ধ্যার নাস্তা খাবার পাঠ চুকে গেলে বিছানায় একটু পিঠ লাগাই। কিন্তু তা কি আর শান্তি মতো পারা যায়? নুবাঈদ জাপটে ধরে রাখে। কোলে নিয়ে হাঁটতে হবে। নতুবা খেন খেন করতে থাকে।
নায়রাহ, নাওঈদকে পড়তে বসানো দরকার। একদিন পড়াতে পারলে ছয়দিন পারি না। সময় এবং এনার্জি দুটোরই কমতি আছে।
আমাদের নিয়ে আম্মু সন্ধ্যায় পড়তে বসাতো। ভীতিকর সময়। পড়া শেষ না করে উঠা যেতো না। ওদিকে আলিফ লায়লা, এক্স ফাইলস, সিন্দবাদ, রবিনহুড শেষ হয়ে যাচ্ছে। নাকের পানি, চোখের পানি এক করে কাদতাম আর পড়তাম। কতো দোয়া করতাম, আম্মু যেন রাতে ব্যস্ত থাকে, যাতে সারা বছর বাসায় মেহমান থাকে ( মেহমান থাকলে আম্মু পড়াতে পারতো না )
পড়তে বসলে আমি আর ভাইয়া সারাদিনের ঘটনা শেয়ার করতাম। বইয়ের নিচে লুকিয়ে গল্পের বই পড়তাম।( আমরা ছিলাম পার্টনার ইন ক্রাইম) ধরা পড়লে অবধারিত ভাবে সব দোষ ভাইয়া র । আমরা শাখামৃগ টাইপ ভদ্র বাচ্চা ছিলাম। আম্মুকে তাই আমাদের নিয়ে বসাই লাগতো।
আমার পুত্র-কন্যা আমার মতো শাখামৃগ টাইপ হলে , তাদের পড়াতে গেলে জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে।( পড়াতে বসার সময় পাচ্ছিনা )
আর তাদের বাবা, চাচার মতো হলে চিন্তা নাই। তাদের দাদির , পড়তে বস- এর বেশি কিছু বলা লাগেনি।
আমার আম্মু, মা- সংসারের এতো এতো কাজ করে একলা হাতে বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করেছেন। কতো কষ্ট, মেহনত করে ছেলে মেয়ে মানুষ করা লাগে- তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এমনিতে তো আর মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত করা হয়নি।
রাব্বির হাম হুমা কামা রব্বায়নি সাগিরা।
Comments
2 responses to “জীবন তখন যেমন”
😂😂😂😀😅🧡🧡🧡
আচ্ছা মেড্যাম ,
(শাখামৃগ টাইপ ভদ্র) এর অর্থ কি?
শাখামৃগ অর্থ বানর 🙂