নারী জাতি

বাসার নতুন সাহায্যকারী মানুষটি বেশ ধীরে কাজ করে। চার পাঁচ দিন কাজ করে আজকে আবার কাজে আসে নি। এটা সেটা করতে বললে জানায় শরীরটা বেশি ভালো না। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাসায় কে কে আছে, ছেলে মেয়ে কয়জন, স্বামী কি করে ইত্যাদি।

জানালো, স্বামী বরিশালে রয়ে গেছে। তিন মেয়ে নিয়ে এই মাসেই তিনি ঢাকায় আসছেন। জিজ্ঞেস করলাম স্বামী ছাড়া একা একা থাকবেন, অসুবিধা হবে না? উনাকে নিয়ে আসলেই তো পারতেন!!

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আসলে তো ভালই হইত। কিন্তু সে তো সুবিধার মানুষ না। সব সময় মারধর করে। একবার মেরে মাথাও ফাটিয়ে দিয়েছে! দেখেন না আমার শরীর কত শুকনা!! অসুস্থ থাকি!!😔 উত্তর শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমি চুপ করে রইলাম কতক্ষণ।

জিজ্ঞাসা করলাম মেয়েরা কি করে? কত বড়? জানালো জামাইয়ের অত্যাচারে তাকে ছেড়ে বড় মেয়েটা চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসছে এক বছর হল। মেজ মেয়েটা জামাইয়ের মারধর খেয়ে টিকতে না পেরে পাঁচ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে মায়ের সাথে ঢাকায় চলে এসেছে। নিজের ছোট মেয়েটার বয়স ও ৫ বছর।

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার মেয়েদের বয়স কত? জানালো বড়জনের বয়স ১৯, মেজোজনের বয়স ১৭ বছর। বিয়ে দিয়েছে ১২ বছর বয়সে 😲। মহিলাকে দেখে বললাম, আপনার মেয়েরা নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর ছিল, কেন এত ছোট থাকতে বিয়ে দিয়েছেন? জানালো তাদের বাবা দিয়ে দিয়েছে। এবং মেয়েরা সুন্দর হওয়াতে শুধু প্রস্তাব আসতো।

অবাক হয়ে ভাবছিলাম মা এবং দুই মেয়ে সবাই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার এবং খুবই অল্প বয়সে।

সাহায্যকারী মহিলা এবং তাদের মেয়েরা যদি শিক্ষিত হতো, তাহলে কি তাদের এভাবে মুখ বুজে সবকিছু সহ্য করা লাগতো??

আমার বাসায় এ পর্যন্ত যতজন সাহায্যকারী মহিলা কাজ করতে এসেছে, প্রত্যেক মহিলা তার পরিবারের কাছে অত্যাচারিত হয়ে বাধ্য হয়ে মানুষের বাসায় কাজ করতে এসেছিল। এবং প্রত্যেকে অশিক্ষিত।

আবার শিক্ষিত হলেও অনেক মহিলারা নির্যাতিত হয়। সেটা আবার অন্যরকম গল্প। হাতে অত্যাচারিত না হলেও মুখে অত্যাচারিত হয়। এই শিক্ষিত মহিলারা আবার কাজের জন্য বাচ্চা অন্যের কাছে রেখে বাহিরে বের হয়। কাজের মানুষের কাছে রেখে চাকরি করতে গেলে বাচ্চা গুলো অত্যাচারিত হয়। মা অথবা শাশুড়ির কাছে বাচ্চা রেখে গেলে মা এবং শাশুড়িরা বৃদ্ধ বয়সে ছোট ছোট বাচ্চা পালতে গিয়ে শারীরিক ভাবে এবং মানসিকভাবে কষ্টকর সময় পার করে।

এত এত পড়াশোনা করে মেয়েরা চাকরি না করলে নিজেরাও আবার মনে কষ্ট ভুগতে থাকে। ওমুক তমুক এটা সেটা করছে, আমি কিছুই করছি না! পুরা জীবনটা বরবাদ সংসার করতে গিয়ে!

আবার বেশি বেশি পড়াশোনা করতে গিয়ে যোগ্য পাত্র না পেয়ে অনেকে বছরের পর বছর অবিবাহিত থেকে যায়। বেশি বয়সে বিয়ে করে অনেকে আবার শারীরিক জটিলতায় সন্তানহীন থেকে যায়।

অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল মেয়েরা সংসার করতে গিয়ে বেশিরভাগ সময় স্বামীর কথায় গুরুত্ব দেয় না। অন্যদিকে নরম-সরম, ভদ্র, শিক্ষিত মেয়েরা স্বামীর কথা মানতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে অত্যাচারিত হয়।

মানে মেয়েরা অশিক্ষিত হলেও সমস্যা , শিক্ষিত হলেও সমস্যা। সমাজের রঙিন চশমায় আমরা যখন নিজেদের দেখি তখন আসলে এই কূল ওই কূল কোন কূলেই শান্তি থাকে না।

কঠিন বাস্তবতায় হাহাকার নিয়ে ছুটে চলা নারী জাতিগণ, অসীম দয়াময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতের জীবনের প্রশান্তির জন্য দোয়া করছি।