মধ্যবিত্ত হাহাকার

প্রতিদিন বাসা থেকে কম বেশি ৫০০ টাকা নিয়ে বের হই। প্রায় প্রতিদিনই হাত খালি করে বাসায় ফিরি। সকালে অফিসে গিয়ে একটা খাওয়া দাওয়া হয়। নাস্তা বাচ্চাদেরকে দিলে ও নিজেরটা রেডি করতে না পারলে কিনে খাই। বাচ্চারা ক্লাস শেষ করে এসে হুজুর আন্টির কাছে যায় পড়তে। যাওয়ার আগে আবার কিছু কিনে দেই।

বাসায় আসার পথে টুকটাক শাক-সবজি, আটা-ময়দা, ডিম, কলা ইত্যাদি যখন যা লাগে নিয়ে আসি। রয়েছে যাতায়াত ভাড়া। মানে ৫০০ টাকা আসলে কিছুই না।

সবজি শুধু পেঁপে ২৫/৩০ টাকা কেজি। বাকি সব ৬০/৭০ বা তার বেশি। আলু ৫০ টাকা কেজি। ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। মানে কিছু কিনতে গেলেই সুপারফাস্ট গতিতে হাত খালি হয়ে যায়। এর মাঝে যদি শখের কিছু কেনাকাটা করি, বেড়াতে যাই বা অন্য কিছু কিনতে ইচ্ছে করে, মন চায় তখন থালা হাতে নিয়ে রাস্তায় বসে যাই!!!

এত কিছুর মাঝে তবুও আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের উপরে আছি। আলহামদুলিল্লাহ প্রতিবেলায় খাবারে শাকসবজি, আমিষ সবই থাকে। মাথার উপরে সুন্দর ছাদ, ঘুমানোর জন্য বিছানা, গায়ের জামাকাপড় কোনটাই কম পড়ছে না।

কিন্তু চারপাশে তাকালে খুব কষ্ট হয়, অনুতপ্ত বোধ করি, অপরাধবোধে ভুগতে থাকি। যখন দেখি মানুষজন দুই মাসেও কোন আমিষ কিনতে পারছে না। আলু এবং একটা সবজি দিয়ে কোনরকম মোটা চালের ভাত খেয়ে জীবনধারণ করছে। সারাদিন রাত পরিশ্রম করে কোনরকম ছোট্ট একটা রুমে ঘুমাচ্ছে এবং সামান্য কিছু পেটে দিয়ে দিন পার করছে। এই মানুষগুলো আগে ১৫০ টাকা কেজি করে পাঙ্গাস মাছ কিনে খেতে পারতো। এখন এ মাছের কেজি আড়াইশো টাকা বা তারও বেশি।

একটা সময় রুই মাছকে পাত্তা দিতাম না। মানে খাবারের মেনুতে এই মাছটা খুব কমন থাকতো। সেই কমন মাছটার কেজি এখন ৪০০ টাকা করে! সবাই যেহেতু কিনতে পারছে না এত দাম দিয়ে, বাজারে তাই এ মাছগুলো ভালো পাওয়া যাচ্ছে না এখন। দু-একটা দোকানে মাত্র থাকে, যা সকাল সকাল শেষ হয়ে যায়।

গরুতে হাত দেয়া যায় না এখন আর। মুরগির দাম কেজিতে অনেক বেড়েছে। সাধারণ মানুষজনের হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে এই জাতীয় আমিষ গুলো। বাজারে দেখলাম ভদ্রস্হ এক লোক গিলা কলিজা কিনছে। আবার একজন মহিলাকে দেখলাম মাছ কাটা লোকের কাছ থেকে মাছের তেল ফুলকা এ জাতীয় জিনিসগুলো ৫০ টাকায় এক পলিথিন কিনে নিল। 😔 অনেককে দেখি ভেঙে যাওয়া ডিম গুলো কম দামে কিনে নিচ্ছে। এসব দেখে দেখে কষ্ট লাগে, অনেক কষ্ট। অক্ষমতার কষ্ট!!!

মুরগির চামড়া, পা, কলিজা, এ জাতীয় জিনিসগুলো সাহায্যকারী খালার জন্য নিয়ে আসি। ৬/৭ টা মুরগির অনেক চামড়া হয়‌। মুরগিওয়ালার কাছে যখন এগুলো খুঁজলাম তখন সে আমতা আমতা করছে। আমাদের অন্য কেনাকাটার ফাঁকে সে ওই জিনিসগুলো নিশ্চয়ই অন্য কারো কাছে বেচে দিয়েছে!! মাঝে বেশ কিছুদিন নেইনি কারণ তখন কেউ সাহায্যকারী হিসেবে ছিল না। এখন নিতে গিয়ে আর পাওয়া যাচ্ছে না!!

আমরা যার যার জায়গা থেকে দুই একজন মানুষকে হয়তো সাহায্য করতে পারি। দু এক বেলায় হয়তো খাবার দিতে পারি বা একটুখানি টাকা পয়সা দিতে পারি। কিন্তু এভাবে কি আদৌ এ সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব?

দেউলিয়া ঘোষিত শ্রীলংকায় ডিম, চিনি, ডাল, আটা এসবের দাম আমাদের দেশের চাইতে অনেক অনেক কম।
তেল: বাংলাদেশ ১৭০/১৭৫ টাকা লিটার, শ্রীলংকায় ৮০ টাকা
চিনি: বাংলাদেশ ১৭৫ টাকা কেজি, শ্রীলংকায় ৮০ টাকা
আপেল: বাংলাদেশ ৩৫০ টাকা কেজি, শ্রীলংকায় ৮৫ টাকা ( লিংক কমেন্টে)
https://mzamin.com/news.php?news=74891
আমাদের ব্যবসায়ীরা কেন কম রাখতে পারছে না?? কোন কিছুর দাম একবার বাড়লে সেটা আর কেন কমে যায় না?? কে দায়ী এর জন্য? 🤔

আমরা খেতে চলতে পারছি। আবার কেউ কেউ বেসিক খাবার টাই খেতে পারছে না। আমাদের চারপাশের মানুষদের জন্য সবার কি খারাপ লাগছে না ?? কারোরই খারাপ লাগছে না??

(খুদের ভাত, ভর্তা খাই সকালের নাস্তায়। খেয়ে ধ্যান করি চারপাশে যারা খেতে পায়না তাদের কি অবস্থা!! এক কালে এগুলো গরিবের খাবার ছিল। এখন শখের খাবার!! গরিবের খাবার মেন্যু দেখলে কোন খাবার আর গলা দিয়ে নামবে না !! 😔)