ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল। পড়ার বইয়ের মাঝে অন্য বই রেখে পড়তাম। স্কুলেও ক্লাসের সময় বেঞ্চির ফাঁকে গল্পের বই রেখে পড়া শুরু করতাম। তখন তো আর এত বই কেউ কিনে দিত না। তাই বন্ধু-বান্ধবের কাছে যখন যা বই দেখতাম, সেটাই নিয়ে পড়ে ফেলতাম। পরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়েছিলাম মন মতো বই পড়ার জন্য। ইউনিভার্সিটিতেও এর সদস্য ছিলাম।
সেই আমি বাস্তবতার খাতিরে সংসার, ক্যারিয়ারের চাপে দিনের পর দিন আর বই ছুঁতে পারিনা। একটা সময় বই এর জায়গা দখল করে নিলো স্মার্ট ফোন। দিনকে দিন বই থেকে আরও দূরে সরে যেতে লাগলাম।
এখন ছানা পোনারা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। নিজে নিজে অল্পস্বল্প বই পড়তে শিখছে। কিন্তু তারা সারাক্ষণ বাবাকে দেখে কম্পিউটারে বসে কাজ করছে, মাকে দেখে সংসারের কাজের বাহিরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বসে আছে। এরকম উপলব্ধির মাঝে তাই যখনই সময় পাই, হাতে বই নিয়ে বাচ্চাদের সাথে গল্পের আসর জমাই।
তবে ধারাবাহিকতা হলো চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত বসা না হলে যে কোন কিছুতে বাচ্চাদের আগ্রহ কমে যায়। সেখান থেকেই চিন্তা শুরু করলাম, হাতে বই রাখতে হবে। অল্প হলেও বই পড়তে হবে। আস্তে আস্তে বই কেনা শুরু করলাম। প্রচুর এবং প্রচুর। নিজের জন্য এবং বাচ্চাদের জন্য।
অনলাইনে এডুকেশন ট্রেনিং কনসালটেন্সি বা ETC’র মারদিয়া মমতাজ আপুকে দেখতাম বুক ম্যারাথন আয়োজন করেছেন। বই পড়ার একটা কনটেস্ট, গতবছর সেপ্টেম্বরের কথা। আবার ওনার উইমেন এক্সপ্রেস গ্রুপে “প্রতি মাসের বই” শিরোনামে সারা মাসে পড়া বইয়ের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। আমার মত “সাবেক পাঠকদের” অনেকেই নিশ্চয়ই এগুলো দেখে অনুপ্রাণিত হতেন।
“বই পড়তে পারছিনা” এরকম মনোযাতনা এবং পাঠের অভ্যাস পুনরুদ্ধারের লোভ – এই দুইয়ের অদ্ভুত স্ট্রাগল আমার। ছানাদের বাবা আমার অবস্থা দেখে বললো, দলবল যোগাড় করে বই পড়ায় নেমে পড়ো। সংসার শিক্ষকতা আর মাতৃত্ব’র কাজের ত্রিমুখী চাপে দলবল যোগাড় করা আর হয়ে ওঠেনা।
তখন ছোট বোন Audity Adrita দেখলাম দলেবলে বই পড়ার উদ্যোগ নিয়ে গ্রুপ খোলার ঘোষণা দিয়েছে (সেপ্টেম্বর ১৭ তারিখ ২০২৩)। তখন মনে হল ইউরেকা, মানুষ পেয়েছি এবার। একটা গ্রুপ খুলেই ফেলি, যেখানে আমরা মায়েরা টুকটাক বই পড়বো, নিজেদের অভ্যাস নতুন করে তৈরি করব, পাশাপাশি যাদের সন্তান আছে তাদের মধ্যেও এই অভ্যাসের একটা বীজ তৈরি করে দিব ইনশা আল্লাহ।
অদ্বিতী খুবই ব্যস্ত একজন মানুষ। ছোট “আব্দুর রহমান”কে সামলে নিজের ব্যবসায়িক কাজ (সেমন্তিনী : Shemontini Home Decor) – কোনভাবেই অন্য দশজনের চেয়ে কম ব্যস্ত না। কিন্তু বই পড়ার প্রতি তার কমিটমেন্ট নিশ্চিতভাবেই আমার চেয়ে বেশি, একবারের বলাতেই রাজি হয়ে গেল।
মাতৃত্ব রিডিং গ্রুপ এর যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি ইনশাল্লাহ।
এখানে যা যা হবেঃ
– সবাই মিলে সিলেক্টেড কোন বই পড়বো
– গ্রুপ সেশনে নিজেদের পড়া বইয়ের ব্যাপারে অন্যদের সাথে শেয়ার করব
– বাচ্চাদের বইয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য কার্যক্রম থাকবে
– মাঝে মাঝে সবাই মিলে অফলাইনে বইয়ের আড্ডায় যুক্ত হবো
বিনিয়োগঃ নিজেদের সময়
প্রক্রিয়াঃ এই ফর্মটি পূরণ করে ফেলুন https://matritto.com/readers
মেয়েদের ও মায়েদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো থাকার একটা উপায় হিসেবে একে আমরা বেছে নিচ্ছি। একই সাথে একটি পড়ুয়া প্রজন্ম তৈরি করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
মুসলিম কিংবা বাংলাদেশী – উভয় ধরনের জাতীয়তার সংকটে ভোগার অন্যতম কারণ সম্ভবত একটি ঐক্যবদ্ধ সুরের অভাব। আমাদের বিশ্বাস ভবিষ্যতের পড়ুয়া প্রজন্ম এই ঐক্যবদ্ধতার সুতা খুঁজে পাবে।
হ্যাপি রিডিং।
ইসরাত জাহান
প্রতিষ্ঠাতা ও সঞ্চালক, মাতৃত্ব