শীতের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। বন্দি কারাগারে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে ভাবলাম বের হতে হবে। কোথাও বের হবো নাকি বাসাতেই থাকবো ডিসিশন নিতে নিতে দুই দিন চলে গেল।
যাই হোক আজ সকালে অনলাইনে দেখলাম সুবর্ণ ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। আজকের। দশটায় টিকেট কাটলাম বিকেল সাড়ে চারটার।
কোনরকম গোছানো শেষ করে বাসা থেকে বের হতে তিনটা বেজে গেল। কলেজের গাড়ি ম্যানেজ করে গেটে যেতে যেতে আরো বেশ কিছু সময় চলে গেল। এরপর যখন রওনা করলাম, দেখি পুরো রাস্তায় জ্যাম।
পিলখানার ভিতরে থাকার কারণে ঢাকা শহরের জ্যাম আমাদের স্পর্শ করে না। কিন্তু যখন বের হই তখন জ্যামে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে যায় । হিসাব এলোমেলো হয়ে যায়।ভাবলাম মোটামুটি সাড়ে চারটার আগে পৌঁছে যেতে পারব।
যখন ৪:১৭ বাজে তখন ও আমরা শাহবাগে। মনে হলো ট্রেন মিস করতে যাচ্ছি। ডিসিশন নিলাম এয়ারপোর্টে গিয়ে ট্রেন ধরব। কেননা ট্রেন বরাবর ৪:৩০ এই ছেড়েছে। আমরা কমলাপুর গিয়ে আর ধরতে পারবোনা।
এদিকে এয়ারপোর্ট স্টেশন যাওয়ার পথে দেখি রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। স্টেশনে ঢুকতে হলে কাছে এসেও অনেক পথ ঘুরে আসতে হয়।তখন ৫টা বাজে। ট্রেন প্লাটফর্মে চলে এসেছে।(৫ মিনিট থামে বিমানবন্দর স্টেশনে) ভাবছিলাম চোখের সামনে আমাদের রেখে ট্রেন চলে যেতে দেখব।
পুরো রাস্তায় আমি আর সে দোয়া পড়তে পড়তে আসছি। অবশেষে যখন স্টেশনে ঢুকলাম, কুলিরা দৌড়ে এসে মালপত্র নিয়ে টান দিল, আমাদেরকে দৌড়াতে সাহায্য করলো। আমরা দেখতে পাচ্ছি ট্রেন ছেড়ে দিল।
জান হাতে নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। পুরাই দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে ফিলিংস। শেষ দৃশ্যে নায়িকা যেমন দৌড়াচ্ছিল ট্রেন ধরার জন্য ঠিক তেমনি নুবাঈদকে কোলে নিয়ে আমি দৌড়াচ্ছিলাম, কুলিরা আমাদের ব্যাগ নিয়ে দৌড়াচ্ছে, নায়রাহ- নাওঈদকে নিয়ে ওদের বাবা দৌড়াচ্ছিল। সেইরকম একটা দৃশ্য।
নিশ্চিত ছিলাম ট্রেন মিস করবো। মনে হচ্ছিল প্রেসার বেড়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি। যেকোন এক বগিতে লাফ দিয়ে উঠলাম। তারা আর এক বগিতে। মালপত্র ছানাপোনা সমেত একটু পর গার্ডেরা আমাদের এক জায়গায় করালো। কিন্তু আমাদের বগি আরো দূর। তাই খালি সিট দেখে এক জায়গায় বসে পড়লাম। সিটে বসে ধীর স্থির হতে আধাঘন্টা সময় লাগলো।
প্রায় নিশ্চিত ট্রেন মিস হওয়া থেকে আমরা এখন বগিতে। আলহামদুলিল্লাহ।
এডভেন্চার শুরু হলো।