স্মৃতিময় খাবার: ভর্তা

ঝাল ঝাল ভর্তা সব সময়ে খুব ভালো লাগে। সেটা যদি হয় কাঁঠাল বিচি আর শুটকির ভর্তা তবে তো কথাই নেই। এই ভর্তা খাওয়ার জন্য খুব মন চাইতো প্রেগনেন্সি কালীন সময়ে। তখন নিজের হাতের কোন রান্নাই খেতে পারতাম না। মনে মনে চাইতাম কেউ যদি একটু কিছু রেঁধে দিতো আমায়। আম্মু থাকতো আমার থেকে অনেক দূরে অন্য শহরে। তাই প্রতিদিন প্রতিদিন কে আর ভর্তা-ভাজি, ছোট মাছ রেঁধে খাওয়াবে??!!!

সহকর্মীরা টের পেয়ে টুকটাক খাবার প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ নিয়ে আসতো। আর কোন দিন মিস হলে, তাহাকে অফিস ফেরত পথে হোটেল থেকে নিয়ে আসতে বলতাম। রাত দশটায় হোটেল গুলোতে ভর্তা, শুটকি টাইপের খাবার গুলো শেষ হয়ে যেত। তাই কখনো সে আনতে পারত, কখনো খালি হাতে আসতে হতো। কি যে খারাপ লাগত তখন!! আন্টি, জেঠিআম্মার পাঠানো খাবারগুলোও ঐ সময় খুব আনন্দ নিয়ে খেয়েছিলাম।

এই ধরনের খাবার গুলো এখনো খুব ভালো লাগে। তাই নিজে বানালেও যেমন অসুস্থতার সময় কার কথা মনে পড়ে যায়, তেমনি এখনো যখন কেউ যত্ন করে কিছু রেঁধে পাঠায় আমার জন্য, ভালবাসায় কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে যায়।

শারীরিক অসুস্থতার সময় কাছের মানুষ, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সবাই যদি একটু সচেতন হয়, যে এই সময় হবু মায়ের একটু যত্ন নেই, কিছু দিতে না পারি অন্তত হাসিমুখে দুটো কথা বলি, তাহলে এত হাহাকার নিয়ে থাকতে হতো না কোন মাকে।

আসলে প্রেগনেন্সি যাত্রার সময়কার ভালোবাসাটুকু অথবা মন খারাপ গুলো সবই বেশ মনে থাকে। সময়টা যেহেতু বেশ সেনসিটিভ , তাই ওই সময়কার সবগুলো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব মনে গেঁথে থাকে। বাবু হবে শুনলে কার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, কে কেমন ধরনের আচরণ করেছিল, কে আমন্ত্রণ না করে এড়িয়ে গিয়েছিল , কারা খবর নেয় নি…… সব মনে থাকে। এমনো হয়েছে অসুস্থ সময়কার শেষদিকে বাসায় এসে বেড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাবু হয়েছে কিনা , কি বাবু হয়েছে এই খবর টুকু পর্যন্ত নেয়ার সময় তাদের হয়নি। অনেকের কাছে আবার এতজন বাবুর খবর খুব বিরক্তিকর ছিল, এই যুগে এত ছেলে মেয়ে হয় নাকি মানুষের!! অথবা আমার অমুক তমুক আত্মীয়-স্বজনের এখনো ছেলে মেয়ে হয় নাই, তোমার কেন হচ্ছে!!!! কত রকম প্রতিক্রিয়া, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখলাম!!!

তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রিয় মানুষগুলোর ভালোবাসা, যত্ন যখন পাই এবং দেই তখন আর এতটা খারাপ লাগে না। এখনো কিছু প্রিয় মানুষ ভালোবাসা নিয়ে ছোট ছোট বক্স ভর্তি করে খাবার-দাবার দিয়ে যায়। এত ভালো লাগে তখন 🥰🥰🥰। আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। এই মানুষগুলোর জন্য মন থেকে অনেক ভালোবাসা এবং দোয়া। আজীবন এমনই থাকুক সবাই।

স্বার্থহীনভাবে যখন কোন কিছু আদান-প্রদান হয় তখন সেই ভালোবাসা, আন্তরিকতা যুগ যুগ রয়ে যায়। কোন কারণে অকারণে এই সম্পর্ক গুলো ভেঙ্গে যায় না। যেখানে স্বার্থ থাকে সেখানেই সম্পর্কের উঠানামা থাকে।

আল্লাহ ভালো রাখুক সব ভালো মনের মানুষগুলোকে❤️❤️।

( দুদিন আগে ভর্তা গুলো বানিয়েছিলাম। প্রিয় আপাকে দেওয়ার জন্য যেইনা লিফটে উঠছিলাম, লিফ্ট খোলার পর দেখি তিনিও বক্স ভরে আমার জন্য ভালোবাসা নিয়ে আসছেন ❤️❤️❤️)