হঠাৎ দেখা

(জামাইকে উতসর্গ 😀 )

ঢাকায় পৌছাতে দেড়টা বেজে গেল। সুবর্ণ ট্রেন থেকে নেমেই ইরা টিকেট কাউন্টারের দিকে ছুটল। পরদিন তুর্ণা নিশিতার একটা টিকেট লাগবে। শুক্রুবার রাতের তুর্ণার টিকেট পাওয়া বিশাল ব্যাপার। ঢাকা-চট্টগ্রাম এর টিকেট সবসময় দুর্লভ!! কিন্তু পরদিন যে তাঁকে ফিরতে হবে… তার অফিস আছে।
কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন… ধুর… চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ঢাকা করাটা বিরক্তিকর হয়ে দাড়িএছে। আর ভালো লাগে না!!
ইরা কোনমতে কাউন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করে পরদিনের টিকেট আছে কিনা, জানিয়ে দেয়া হলো নেই। হতাশা, ক্লান্তিতে সে চলে আসতে থাকে, কেননা সে বাস জার্নি করতে পারে না। এমন সময় এক ছেলে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, আপনি ইরা না!! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে পড়েছেন। সাইফ, সোমার বন্ধু…… এক নিশ্বাসে ছেলেটি কথাগুলা বলে থামে।
ইরা অবাক হয়ে তাঁকে দেখে… ‘আমিতো আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনা’। ছেলেটি নিজের পরিচয় দেয়। ‘আমি নিও। সাইফ, সোমার বন্ধু। আমিও আপনার সাথে এক ব্যাচ এ পড়েছি, অন্য বিষয়ে। এমনকি আমি চট্টগ্রামে আপনার সাথে একি কলেজে পড়েছি’।

ইরা খুব অবাক হয়। এই ছেলেকে সে কখনো কোথাও দেখেছে বলে মনে পড়ছেনা। আর তার ক্লাসমেট দু’চারজন ছেলে ছাড়া কোন ছেলের সাথে সে কখনো অপ্রয়োজনে কথা বলে নি… তাছাড়া ছেলেটা এতো নিশ্চিত হয়ে তার বন্ধুদের কথা বলছে, তার কথা বলছে। অথচ ইরা তার কথা কখনো শুনেনি সোমার কাছে!!

তবুও ভদ্রতাবশত সে ছেলেটার কথার জবাব দিচ্ছিল যেহেতু সাইফ, সোমার বন্ধু!!
নিও ইরার টিকেট সমস্যার কথা শুনে ব্যস্ত হয়ে মোবাইল, মেইলের মাধ্যমে খোজা শুরু করল। সে নিজেও পরদিন কুমিল্লার টিকেট পাচ্ছিলনা। ইরা অবাক হয়ে ভাবছে, এই ছেলে আমার টিকেট নিয়ে এত অস্থির হবার কারণ কি!! নিও বিভিন্ন জন কে ফোন দিয়ে টিকেট জোগাড় করতে ব্যর্থ হোল। ফাকে ফাকে ইরা কি করছে এবং সে কোথায় আছে এসব নিয়ে টুকটাক কথা বলল। ইরা টেনশনে কথা না বাড়িয়ে নিওকে বিদায় দিয়ে চলে গেল।
নিও বেশ লাজুক হওয়ায় মেয়েদের সাথে কথা বলেনা বিনা প্রয়োজনে। মেয়েটাকে দেখামাত্র কি যেন হয়ে গেলো তার মধ্যে!! স্টেশন থেকে ফেরার সময় হঠাত নিওর মনে হতে থাকে এই মেয়ে আমার বউ হলে কেমন হয়!!! দিন যায় আর নিওর আকুলতা বাড়তে থাকে…

এরপর একমাস কেটে গেল। হঠাত একদিন সোমা ফোন দিল। ‘ইরা, নিও ভাই তোকে বিয়ে করতে চায়। সে খুব ই ভালো একজন মানুষ’। ইরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, নিও ভাইটা কে??
আরে, তোর সাথে যে রেল স্টেশনে দেখা হোল গতমাসে…

এতক্ষনে ইরা বুঝতে পারে। ‘কিন্তু আমি তো তাঁকে চিনিনা। আর তাঁকে আমার মনে নেই। মনে আছে শুধু কে একজন এসে আমার সাথে কথা বলা শুরু করে দিল। আমি তাকিয়েও দেখিনি কে কথা বলছে আমার সাথে!!
সোমা এবার ইরাকে বোঝাতে থাকে… না পেরে ইরার আম্মুর সাথে কথা বলা শুরু করল। কেননা তার স্বামী সাইফের খুব ভালো বন্ধু হিসেবে সে নিওকে চেনে। আর তারা একই শহরের, একই কলেজের এবং একই ফ্যাকাল্টির মানুষ হওয়ার ব্যাপারটা প্লাস পয়েন্ট মনে হয় সবার কাছে।
বিয়ে নিয়ে পরিবারের, বন্ধুদের আগ্রহে ইরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরা রাজি হয় নিওর সাথে কথা বলতে। কিছুটা কৌতূহলও হয়। কেমন এই মানুষ যে আমাকে কলেজ থেকে চেনে। একই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় হবার পরও কখনো কথা হয়নি। দীর্ঘ আট বছর পর কথা বলে একেবারে বিয়ের প্রস্তাব ই দিয়ে ফেলল!!!
কিছুটা চড়াই উতরাই পার হয়ে ইরা ও নিও পরস্পর মুখমুখি হয়…… সালাম বিনিময় করে তারা কথা শুরু করে। কিছু আলাপ আলোচনার পর যখন ইরার মনে হোল মানুষটা তো বেশ লাজুক, একে পছন্দ করা যায়!! তখন ইরা বলে, আমি একজন ইমানদার মানুষকে আমার জীবন সাথী হিসেবে চাই, যে আমার দুর্বলতা দূর করে জান্নাতে একসাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। যে সমাজের রীতি নীতির চাইতে ইসলামকে প্রাধান্য দিবে। নিও জবাব দেয়, ইনশাল্লাহ আপনি আমাকে সেভাবেই পাবেন।
এই জবাব পেয়ে এবং জবাব দিয়ে ইরার মুখে এবং নিওর মুখে একসাথে স্বর্গীয় হাসি ফুটে উঠে।