জুলাই বিপ্লবের সময় প্রায় প্রতিটি রাত ছিল নির্ঘুম। এক একটা ঘটনা সম্পর্কে দেখতাম, শুনতাম, জানতাম …..আর চোখের পানিতে বালিশ ভিজাতাম। শেষে মনে হতো যেন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে আমরা আছি। ঘরে ঘরে তখন রেইড হচ্ছিল। কারা কারা আন্দোলনে যাচ্ছিল তা খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা চলছিল এবং ছাত্রদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। এ যেন ২৫ শে মার্চের কাল রাত্রি ঘটছিল!
আকাশে হেলিকপ্টার উড়ে যায়। সেখান থেকে গুলি ছোড়া হচ্ছে আর বাসার ভিতরে মানুষজন মারা যাচ্ছে। বাসা থেকে বাহিরে বের হলে পুলিশগুলি চালাচ্ছে জায়গায় জায়গায়। গুন্ডা লিগ, পুলিশ, সেনাবাহিনী মিলেমিশে একাকার হয়ে নিরপরাধ ছাত্রদের মেরে ফেলছে।
কি যে দম বন্ধ কর পরিস্থিতি ছিল পুরোটা সময়!! তখন সবসময় প্রাণ ভরে দোয়া করতাম আল্লাহ যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে বিজয়ী করেন। আর ডাইনি ও তার সহযোগী দের জন্য বদ দোয়া করতাম, আল্লাহ যেন তাদের দুনিয়া এবং আখিরাতে লাঞ্ছিত করেন।
আগস্টের ৪ তারিখ। সারাদিন রাত ক্রমাগত নামাজ, দোয়া পড়েছি। এই রাতে বাংলাদেশের লাখ, কোটি মানুষ তাহাজ্জুদ পড়েছে এবং পাঁচই আগস্ট রোজা রেখেছে। এক দফার নিয়তে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এক সাথে নফল ইবাদত করেছে , যা একটি বিরল ঘটনা!
পাঁচই আগস্ট সকালে, দুপুরে জনে জনে ফোনে কথা বলছি। অনেকেই জানাচ্ছে গণভবনের দিকে রওনা দিয়েছে। অস্থির আমি বারবার খবর দেখছি, গণভবনের দিকে কি ঘটনা ঘটছে জানার জন্য।
দুপুরে ডাইনিটা পালিয়ে যাওয়ার খবরে সাথে সাথে আমরা দুজন শোকরানা নামাজ আদায় করলাম।তারপর বাচ্চাদের পাশের বাসায় রেখে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
স্বাধীন বাংলার আকাশ বাতাস যে কত সুন্দর তা যেন নতুন করে আবিষ্কার করলাম। অনেক রক্তের বিনিময়ে, অনেক চোখের পানি, অনেক দোয়ার ফলে আল্লাহ নিজ হাতে আমাদের এই বিজয় দান করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। বিজয়ের আনন্দে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাটে অনেক মানুষের ঢল নেমেছে। আমরা শাহবাগে গিয়ে সহকর্মী এবং বান্ধবীর সাথে একত্রিত হয়ে জন সমুদ্র দেখতে থাকলাম।
‘ একতাই বল’- এর সার্থকতা চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম!
আল্লাহ যেন আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে থাকার তৌফিক দান করেন। কালনাগিনী এবং তার দোসরদের বিষবাষ্প থেকে বাংলাদেশের মানুষকে যেন নিরাপদে রাখেন।
৩৬ শে জুলাই এর এক মাস পূর্তি!