দ্বিতীয় দিন
৩১ ডিসেম্বর। ফজর শেষে রেডি হওয়া শুরু করছিলাম। বাচ্চাদের বাবা রাতে আমার সাথে ছিল। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বাসায় গেল আম্মুকে আনতে। অপারেশন সিরিয়াল কখন তেমন কিছু আগে থেকে বলে নি। তাই ভেবেছিলাম আটটার মধ্যে আম্মুকে নিয়ে পৌঁছে যাবে। এদিকে সাতটার দিকে নার্স এসে ওটির কাপড় দিয়ে গেল এবং আমাকে রেডি হয়ে যেতে বলল। একটা রুমে বেবি মুভমেন্ট মনিটরিং করতে বলল । একজন এসে হাতের ক্যানোলা লাগিয়ে গেল। ততক্ষণে ডাক্তার এসে, ব্লাড রেডি আছে কিনা জিজ্ঞেস করল। আমি অবাক জিজ্ঞাসা করলাম, ব্লাড কি করার কথা? ডোনার রেডি আছে। তখন তিনি আগের রাতে ব্লাড রিকুইজিশন কাগজের কথা বললেন, যেটা আমি বা সে, কেউই বুঝতে পারিনি। কেননা আগের দুবার ডোনার রেডি করে রেখেছিলাম। কিন্তু দেয়া লাগে নি । আর এখানে ওটিতে ঢোকার আগে ব্লাড রেডি করে রাখতে হয় । ৩য় সিজার, তাই রিস্ক বেশি। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করল, ডোনার এখন কোথায় ? সকালে কখন লাগবে এটা জানা ছিল না। আমার এক কলিগ ইমারজেন্সি ভিত্তিতে হাসপাতালে চলে আসলো ব্লাড দেয়ার জন্য । ততক্ষণে আমাকে ওটিতে ঢুকানো হলো।
বেবি মুভমেন্ট দুবার মনিটরিং করা হলো। রিপোর্ট আসলো বাবুর হার্টবিট ঠিক আছে।
আগে ডাক্তার ভিজিটের সময় ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে ডাক্তার আমাকে সাজেশন দিচ্ছিল লাইগেশন করানোর। যেহেতু এটা তৃতীয় সিজার। তখন আমি তেমন কিছু বলিনি । এরপর আগের রাতেও জিজ্ঞেস করল লাইগেশন করাব কিনা । তখন আমি বলেছিলাম ইমপ্ল্যান্ট পরব।
ওটিতে ঢুকানোর আগে বাচ্চাদের বাবা এবং আম্মুর সাথে দেখা হল । তারপর আমাকে রুমে ঢুকে পরল।এরপর ওখানের ডাক্তার জিজ্ঞেস করল, কয় ছেলে মেয়ে ? বললাম। জিজ্ঞেস করল সবাই বেঁচে আছে কিনা । বললাম আলহামদুলিল্লাহ, সবাই সুস্থ আছে কিনা বললাম আলহামদুলিল্লাহ। তখন জিজ্ঞেস করল তাহলে তৃতীয় বার কেন? মনের খুশিতে ? জবাব দিলাম আল্লাহ দিয়েছে । বললো লাইগেশন করাবেন? উত্তর দিলাম নাইন্টার্ন ডাক্তার দুজন ছিল ছেলে এবং মেয়ে তারা বিশেষ করে আলাপ শুরু করবে আমাকে নিয়ে কেন তিন নাম্বার এবং কেন লাইগেশন নয় ! 🤔🤔😑😑😑😑
এনেসথেসিয়া দেয়ার জন্য ডাক্তার আসলো তখন সবকিছু রেডি করছিলাম । এখনই দিবো তখন ডাক্তাররা সিনিয়র একজনের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমার সিজার এর জন্য অ্যাপোয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছিল । নয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও ওই ডাক্তার না আসায় উপস্থিত ডাক্তাররাই অপারেশন শুরু করে। একটু পর আমার ছেলের কান্না শুনতে পেলাম ,আলহামদুলিল্লাহ । আমাকে ছেলেকে দেখিয়ে বাইরে আম্মুর কাছে বাবুকে দিয়ে আসে। আর আমাকে অপারেশন শেষে post-operative রুমে দিয়ে আসলো। দশটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত ছিলাম ওখানে। এর মধ্যে স্যালাইন চলছিল । কিছুক্ষণ পরে কাপাকাপি শুরু হলো। প্রায় এক ঘণ্টার মতো করে আস্তে আস্তে ঠিক হয়। এর ফাঁকে আম্মু দুইবার এসে বাবুকে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে।
রুমে নেয়ার পর নায়রা, নাওঈদ ও খাদেমা কে নিয়ে তাদের বাবা আসে। তারা খুবই অবাক হয়ে নতুন বেবি কে দেখতে লাগল। সন্ধ্যার দিকে সবাই কে বাসায় দিয়ে আসতে যায় বাচ্চাদের বাবা। বাবু অন্য খাটে ঘুমানো, আমি আমার বেডে শোয়া। স্যালাইন চলছে একটার পর একটা, ক্যাথেটার লাগানো। হঠাৎ দেখি বাবুর মুখে হাত নাড়ানোর ফলে কাপড় চলে আসছে। সে সমানে হাত নাড়ছে । আমি চিৎকার করে নার্সদের ডাকতে লাগলাম । ক্রমাগত ৮/১০ মিনিট চিৎকার , কান্না কাটি করার পর দুজন রুমে ঢুকে বাচ্চাটার মুখ থেকে কাপড় সরালো। ( কেবিন হওয়াতে বাইরে থেকে নাকি বোঝা যাচ্ছিল না, কোন রুম থেকে আওয়াজ আসছে।) সে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা !! 😰😰😰 ভাবছিলাম বাচ্চাটা বুঝে চোখের সামনে দম আটকে মারা যাচ্ছে!! 😭😭
লার্নিং : অপারেশন রোগীকে কখনো একা ফেলে যাওয়া ঠিক নয়।
হসপিটাল ডায়েরি ২
by
Tags: