সেদিন যেন জন্মালো ছেলেটা। নাওঈদ আবদুল্লাহ। আমাদের বড় পুত্র। আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে আর পাজির পা ঝাড়া হচ্ছে। কোন কিছু উল্টাপাল্টা না করা পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই। হাতে খেলনা পাওয়া মাত্র নাট বল্টু খুলে নষ্ট করে ফেলবে। যেহেতু নানা বিষয় শেখা শুরু করেছে তাই আস্তে আস্তে সময় , দিন , বছরের সাথে তাকে পরিচিত করাচ্ছিলাম। এভাবে সে বুঝতে পারল তার জন্মদিন সামনে। তাই সে প্রশ্ন করা শুরু করলো, জন্মদিনে কি করবো ? আমার জন্মদিনে কি কি হবে?
জন্মদিন পালন করা যে স্পেশাল কিছু না, তাকে বিষয়টা বুঝানোর জন্য বেশকিছু উপমা দেয়া লাগলো ।
শুভ জন্মদিন কেন হবে বাবা? এই দিন তুমি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতে এসেছো। তুমি এসেছ তাই আমরা অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু এই জন্যই ডাক্তাররা মাম্মামকে এতগুলো কষ্ট দিয়েছে । কতগুলো ইনজেকশন, সেলাই, কত কষ্ট। তাহলে এটা কেন খুশির দিন হবে? আর এত কষ্ট করার জন্য সব উপহার তো আমাকেই দেওয়া উচিত! তাই না বাবা?
ছেলে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। তাকে আরো বললাম , এই যে তুমি বড় হলে তাই তোমার ফিডার বন্ধ করে দেওয়া হল। এটা ভালো হয়েছে? (দু বছর বয়স থেকে রাতে ঘুমানোর আগে ফিডার খায় এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে)
আবার তাকে বললাম এই যে তুমি এতদিন ডায়াপার পরতে, এখন তোমাকে আর ডায়াপার পরানো হবে না। তুমি ভেজা কাঁথায় শুয়ে থাকো এখন । (কাঁথা ধুতে ধুতে আমার অবস্থা খারাপ)। এটা কি ভালো হলো? বড় হয়ে গেছো। তাই তোমাকে এখন প্রতিদিন অ, আ, এবিসিডি লিখতে হবে । (একদিন লিখলে এক সপ্তাহ লিখতে চায়না!) এগুলো কি সব ভালো হলো ?না পচা হলো?
সে তখন চিন্তা ভাবনা করে উত্তর দিলো, পচা হলো। এভাবে তাকে বুঝাতে লাগলাম, তুমি যত বড় হবে ততো তোমার কাজ, দায়িত্ব বেড়ে যাবে। আরেকটু বড় হলে নুবাঈদকে দেখাশোনা করা লাগবে। মা- বাবাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে, রুটি বানিয়ে দিতে হবে । পড়াশোনা না করতে চাইলে পিট্টি খেতে হবে। যত বড় হবে ততো কাজ বাড়বে। তাই এক বছর করে বড় হলে সেটা শুভ জন্মদিন হবে না!! অনেক বেশি কাজ করতে হবে। তাই তোমার কোনো উপহার নাই!! বেচারা বুঝতে পারল ওটা আসলে শুভ জন্মদিন না দুঃখ জন্মদিন!!
তার মানে এই না যে সে কখনো জন্মদিনের ফিলিংস পায়নি । প্রথম জন্মদিন পালিত হয়েছে নানার বাড়ির ভালোবাসায়। সেটা অন্য কথা। (দাদা বাড়ি থেকে নানা বাড়ি গিয়ে সারপ্রাইজ পায় সেবার)। তবে সামাজিক প্রেশারে সে যাতে আর জন্মদিনের কথা না বলে , এটা বাধ্যতামূলক অনুষ্ঠান না মনে করে। তাই এত কিছু বোঝানো।
জন্মদিন আমাদের ভালো লাগে , কেউ একজন আমাদের উইশ করলো, আমার কথা মনে রাখল, গিফট দিল, নিজেকেই স্পেশাল মনে করার একটা অনুভূতি তৈরি করে…. এজন্যই মনে হয় ভালো লাগে ।
এই স্পেশাল অনুভূতিটা বাচ্চাদের দেয়ার জন্য তাদেরকে প্রায় ই কেক খাওয়ানো হয়, কোন ভাল কাজের উপহারস্বরূপ। তারা যেটা আবদার করে সেটা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়। তবে আয়োজন করে বাচ্চাকাচ্চা ডেকে এনে অনুষ্ঠান করার মতো এখনো সুযোগ হয়নি। তাই করা হচ্ছেনা। শেষ যেবার অনেক বাচ্চাদের বাসায় ইনভাইট করেছিলাম সেটা ছিল , ওরা সুরা ফাতিহা মুখস্ত করার উপলক্ষ হিসেবে। হয়তো সামনে বাচ্চাদের কোন একটা অর্জনের জন্য তাদের বন্ধুবান্ধবকে ইনভাইট করবো। তবে জন্মদিন পালন- এটা যে আমাদের কালচার না এই বোধ যাতে বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারে তাই এত কিছু বোঝোনো। সমাজে ওরা চারপাশে দেখছে জন্মদিন পালন করা স্বাভাবিক বিষয়। যাতে তারা হীনমন্যতায় না ভোগে তাই ছোট মানুষের মাথায় ছোট ছোট চিন্তা দেয়া।
চার বছরের বড় ভাইয়া সে এখন। বড় বোনকে ও দেখে রাখতে হবে, ছোট ভাইকে ও সামলে রাখতে হবে। অনেক দায়িত্ব সামনে। আল্লাহ যেন তাদেরকে উত্তম মুমিন বান্দা হিসেবে কবুল করেন।
Comments
2 responses to “বড় পুত্র”
আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম,
আমি আল শাহিয়ান ক্লাস 10 ( i ) ম্যাডাম আমার বই পড়ার শখ কখন ছিল না এখন ও নেই কিন্তু আপনার প্রতিটি লেখা কথা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে আপনার লেখা কে আমার পক্ষ থেকে সম্মান জানাই আশা করি আমাদের ভবিষ্যৎ এ ধরণের আরও সুন্দর লেখা উপহার দিবেন।
ওয়ালাইকুমুস সালাম শাহিয়ান। আশা করি কোন একদিন তুমি বই পড়তে ভালোবাসবে।