রোজনামচা – এ মাদার অফ থ্রি লিটল বার্ডস

রোজনামচা – এ মাদার অফ থ্রি লিটল বার্ডস

বাবার বাড়ি থেকে বেশ অনেকদিন থেকে বেড়িয়ে আরাম করে আসলাম। এখন নিজের সংসারে মোটামুটি যুদ্ধরত অবস্থায় আছি।🙄

চট্টগ্রাম থেকে আসার পর থেকে নায়রার বেশ জ্বর। তিন দিন দেখার পর ডাক্তারের কাছে নিলাম । এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরু হলো। জ্বর কমার পর শুরু হলো তার দাঁতের মাড়ি ফুলে ওঠা । দুদিন পর সেটাও একটু কমলো। এখন ব্রাশ করলে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে বাসায় ফিরে আসলো । পরদিন আবারও দৌড়াতে গিয়ে সাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়ে আসলো ।

খেলতে গিয়ে নাওঈদ ও এমন ধুমধাম পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। ওরা এই বয়সে দুজন মিলে এতবার পড়েছে, আমি মনে হয় আমার এই বুড়া বয়সেও এতবার পড়ে গিয়ে ব্যথা পাইনি। চলতে-ফিরতে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাওয়াতে তারা এখন বিশেষজ্ঞ।
বোনের জ্বর ভালো হয়েছে । এখন নাওঈদের জ্বর শুরু হল। গলা ব্যথা, জ্বর, বমি। ওষুধ চলছে । ওষুধ খাওয়ালে একটু কমে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার আসে। আবার তিন দিন অপেক্ষা।😓

নুবাইদ হামাগুড়ি দেওয়া শিখেছে। পুরা বাসা হামা দিয়ে হেঁটে বেড়াতে চায়। কোলে থাকে না, পিছলে নেমে যায় । ওয়াকারে থাকে না, কাঁদতে থাকে। কন্ট্রোল হারিয়ে প্রায় প্রতিদিন ধুমধাম পড়ে আর মাথার সামনে-পিছনে ব্যথা পায় । দরজায় আঙুল ঢুকিয়ে নিজেই চাপ দিয়ে ব্যথা পায়। এটা সেটা যা পায় তাই মুখে দেয়। মনে হয় চেক করে দেখে টক-মিষ্টি নাকি ঝাল ? জুতা-স্যান্ডেল পেলে সাথে সাথে মুখে দিয়ে ফেলবে। কাজটা সে খুব দ্রুতগতিতে করে। কারণ সে বুঝতে পেরেছে জুতা-স্যান্ডেল দেখলে তার হাত থেকে আমরা সেটা কেড়ে নিয়ে যাই। তাই সে জুতার নিচের অংশ এত দ্রুত মুখে দেয়, যেন দেরি হলে গুনাহ হয়ে যাবে। ফলাফল তার পেট খারাপ । দিনে পাঁচ-সাতবার পটি করে। দেখা যায় পরিষ্কার করে নতুন ডায়াপার পরানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আবার পটি করে ফেলে।

এছাড়া মাটিতে হামা দিয়ে বেড়ানো দুই হাত প্রায় সময় মুখে থাকে। যেন আঙ্গুলগুলো থেকে জুস , শরবত, ড্রিংকস একটার পর একটা বের হতে থাকে । হয় ডান হাতের আংগুল নতুবা বাম হাতের আঙ্গুল তার মুখেই থাকে। এর ফলে দেখা যায় প্রায় দিনই সে মুখে আঙ্গুল দিয়ে বমি করছে। আর সারাদিন আমাদের পিছু পিছু ঘুরতে থাকে। হয় মা নতুবা বাবা কারো না কারো পিছু পিছু থাকতেই হবে। ক্লাস করার সময় সে প্রায় রুমে চলে আসে এবং তার নিজস্ব ভাষায় কোলে নেওয়ার জন্য চেঁচামেচি করতে থাকে।

এইতো গেল তাদের কথা। এবার আসি কাজের কথায় । সকালের নুবাঈদের নাস্তা রেডি করে ক্লাস শুরু করি। এর পর একটা ক্লাস শেষ হলে তারপর অন্যদের নাস্তা রেডি করতে করতে আবার আরেকটা ক্লাসের সময় হয়ে যায়। এভাবে কখনও দুইটা ক্লাস কখনো তিনটা ক্লাস থাকে । দেখা যায় সকালের নাস্তা আগের দিন রাতে রুটি পরোটা বানিয়ে বক্স করে রাখি, দুদিনের জন্য। অথবা ফ্রোজেন পরোটা ও কিনে রাখি দু চার দিন পর পর শর্টকাট খাবার হিসেবে। এদিকে প্রায় চার ধরনের ক্লাস নিতে হয়, চার ধরনের ক্লাসের জন্য আলাদা করে স্লাইড রেডি করা লাগে। সেজন্য আবার মাঝরাতে বসতে হয় বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাবার পর।

ক্লাস শেষে বিছানা গোছানোর কাজ, বাজার করা , কাপড় ধোঁয়া ইত্যাদি কাজ চলতে থাকে । বড় দুজন এখনও বিছানায় ভেজায়। তাই প্রতিদিন সকালে প্রচুর কাপড় জমে যায়। মিনিমাম দুইবার করে দুইজনে প্রায় চার বারে অনেকগুলো কাথা জামা প্যান্ট নোংরা করে। তাদের এখন আর ডায়াপার পরানোর যায় না, তাদের সাইজ নাই। তাই অভ্যাস করাতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো এই বদ অভ্যাস ঠিক হয়নি। এই শীতে কাপড়ের পরিমাণ আরও বাড়বে , বাড়ছে। কেননা গায়ে কাঁথা চাদর-কম্বল ইত্যাদিও দেয়া লাগছে সেগুলোসহ নষ্ট হয়।কাপড় গুলো আবার পাঁচতলার ছাদে উঠে দিয়ে আসতে হয়। বারান্দায় রোদ না আসার ফলে কাপড় গুলো দু’দিনেও শুকায় না। কাপড় দেয়া এবং ছাদ থেকে আনা এটাও একটা বড় কাজ। এরপর চলে রান্না, বাচ্চাদের গোসল ,ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি। এসব করতে করতে নিজের খাওয়া , গোসল শেষ হতে হতে সাড়ে তিনটা , চারটা বেজে যায়। ফরজ ইবাদত গুলা খুব টেনে খিচে কোনরকমে করা হয়।😔

বিকালে বাচ্চারা খেলতে নামে। একটু পরে তারা ফিরে এসে জিজ্ঞেস করে , নাস্তা কি খাবে? ততক্ষণে দেখা যায় শরীর চলছে না। কিন্তু কোন না কোন কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। হয়তো সিংক ভর্তি থালা-বাসন পড়ে আছে অথবা বিছানা ভর্তি এলোমেলো কাপড় । এর মাঝে সন্ধ্যার জন্য হালকা বা ভারী কিছু না কিছু নাস্তা তৈরি করা লাগে । ফাঁকে ফাঁকে নুবাঈদকে সার্ভিস দেয়ার বিষয়ে তো আছেই।

রেস্ট্রিক্টেড এরিয়াতে বাসা হওয়ার কারণে বুয়া সার্ভিস নিতে পারছিনা । যার কারণে একা হাতে সব বিষয় ম্যানেজ করা লাগছে। যদিও বাচ্চাদের বাবা বেশ হেল্প করে। বিশেষ করে বাচ্চাদের খাওয়া দাওয়ার পার্টটা সেই দেখাশুনা করে এবং টুকটাক সে যদি ছোট জনকে দেখে তখনই আমি কিছু না কিছু কাজ করতে পারি। কিন্তু ভদ্রলোকের ওতো কাজ করা লাগে!!

সারাদিন চার হাত-পায়ে দৌড়াতে থাকি। তবুও মনে হয় যেন কাজ শেষ হয় না ।যেদিকে তাকাই এলোমেলো লাগে সবকিছু। তবুও দিনশেষে বাচ্চাগুলোর হাসি মুখ দেখলে সব কিছু ভুলে যাই।
আর নিজেকে সান্ত্বনা দেই এই বলে যে ,
প্রতিটি কাজের বিনিময়ে রয়েছে পুরস্কার এবং বাচ্চাগুলো হলো আমার ইনভেস্টমেন্ট, সাদকায়ে জারিয়া । মরে গেলে যখন আমল করা বন্ধ হয়ে যাবে তখন যাতে তাদের পাঠানো ক্রমাগত দোয়া অন্ধকার কবর কে আলোকিত করতে পারে। সেই আশা এবং ভালোবাসা নিয়েই খুশি মনে দিনগুলো পার করছি। জানি বাচ্চারা বড় হয়ে গেলে আর কিছু দিন পরেই এই ক্লান্তিকর সময়গুলো শেষ হয়ে যাবে।🥰🥰🥰🥰

আমার সংসার- স্যোশাল সাইটে কেন লিখছি??
আমার মতো অনেকেই সংসার নিয়ে এমন কষ্টকর এবং ক্লান্তিকর সময় কাটাচ্ছেন। কাজের প্রেসারে ডিপ্রেসড হয়ে আছেন। তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, শীঘ্রই এই সময় কেটে যাবে। তখন আর এত খারাপ লাগবেনা। প্রায় প্রত্যেক মায়েদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কষ্টকর সময় ফেস করতে হয়। আমাদের দেশে ঘরে ঘরে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। মায়েরা শুধু নিজেদের শরীর ও মনের ব্যাপারে একটু যত্নবান হবেন। সবকিছু পজিটিভ ভাবে দেখার চেষ্টা করবেন। তাহলে এই কষ্ট গুলোর ওজন একটু কম মনে হবে।
পরিশেষে দোয়া চাই সবার কাছে, যাতে আমরা সুস্থ থাকি সবাই।
( দিনের বেলা যখন মনে ভাব এসেছিল তখন পোস্টৌ লিখা শুরু করে সাত আট দফায় মাঝ রাতে শেষ করলাম।)

ছবিটিতে দেখা যায়,ট্রেনে চড়ে বাসায় যাবার সময় কফি বানিয়ে আয়েশ করে বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। এই প্রিয় কাজটি করার সময় এখন পাইনা বললেই চলে 😔

Posted

in

by

Tags: