সন্তানদের আমরা খুব ভালোবাসি। এই ভালোবাসা থেকেই আমরা রক্ষণশীল আচরণ করি।এটা করো না, সেটা ধরো না, ওখানে যেও না ইত্যাদি ইত্যাদি। বাচ্চারা খেলতে চায়, বেড়াতে চায়, বন্ধুত্ব করতে চায়। কিন্তু নিজেদের অলসতার জন্য অথবা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে আমরা হয়তো ওদের কে বেড়াতে বাহিরে নিয়ে যেতে পারি না। আবার আমরা ওদেরকে একাকী ছেড়ে ও দিতে পারি না কেননা সমাজের চারপাশে শকুন, হায়নারা ঘুরে বেড়ায়। একাকী বাচ্চা পেলেই খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলবে। অথচ ওদের দৌঁড়ে ঘুরে বেড়ানো শৈশব খুব জরুরী। বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য সবুজ মাঠ-ঘাটের বিকল্প আছে বলে আমার জানা নেই।
বাসার কাছাকাছি মাঠগুলোতে, পার্কগুলোতে যদি আমরা ওদের নিতে পারি, বাচ্চাদের একসাথে খেলার ব্যবস্থা করতে পারি, ওদেরকে ওদের ভুবনে কিছুক্ষণের জন্য ছেড়ে দিতে পারি- তখন উপলব্ধি করা যায় ওরা কতটা আনন্দ পায়।
ওদের ভুবনে ওদের ছেড়ে দিলে হয়তো তারা পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে, অন্য বাচ্চাদের সাথে হয়তো মারামারি করে ব্যাথা পেতে পারে অথবা খেলায় হেরে গিয়ে মন খারাপ করতে পারে।কিন্তু এই সমস্ত বিষয় ই তার বেড়ে ওঠার এক একটি ধাপ। ওদের সুন্দর বেড়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য ওদের প্রস্তুত করা উচিত।
আমার ছোট পুত্র তেরো মাস বয়সে এখনো হাটা শিখে উঠতে পারেনি। সেদিন দেখি মুখে বেশ রক্ত, ঠোঁট ফেটে গেছে। তার মানে ধুমধাম করে পড়ে কোন এক জায়গায় বাড়ি খেয়েছে।রক্তাক্ত মুখ দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বাসায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাঁদেও নাই তাই টেরও পাইনি আমরা।
অন্যদিন চুলা জ্বালিয়ে ম্যাচের কাঠি টা চুলের নিচে ছুড়ে মারলাম কিন্তু সেটা বেশি দূর যায়নি হয়তো। ছোট পুত্র কোন এক ফাকে পায়ের নিচ দিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। সে চট করে আধা জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠিটা মুখে ঢুকিয়ে দিল। আবার দেখলাম সাথে সাথে সেটা ফেলে দিয়েছে। কোন সাড়াশব্দ করল না। তাই আমি আর গুরুত্ব দিলামনা। ভাবলাম অন্য একটা কাঠি হয়তো সে ধরেছে। পরের দিন দেখলাম ঠোঁটের পাশে দাগ হয়ে গেছে। তার মানে সেই জ্বলন্ত কাঠিতে তার ঠোঁটের পাশে একটু পুড়ে গিয়েছিলো।
আর বড় পুত্র-কন্যা তো দু এক দিন পর পরই পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসে। মিনিট পাঁচেক থেকে চোখ মুছে আবার তারা খেলতে চলে যায়।
বিষয়টা হলো বাচ্চাদের দুরন্তপনাগুলো আমাদের অনুমোদন করতে হবে, পাশাপাশি ওদের দিকে বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তারা কোনো ধরনের আঘাত না পায় আবার তাদের আনন্দের কোন ঘাটতি ও যাতে না হয়।
সতর্কতা- আমাদের ভাড়াটিয়া আন্টির পিঠাপিঠি তিনটা বাচ্চা ছিল। তিনটা বাচ্চাই সারাদিন সমানে চিৎকার-চেঁচামেচি , মারামারি, খেলাধুলা করতো। তেমনি কোন একদিন আন্টি কাজ করছিল আর রান্নাঘর থেকে একটা আওয়াজ আসছিল।আন্টি প্রথমে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি । কারণ ওরা তো সারাদিন নানারকম সাউন্ড করতেই থাকে।যখন টানা দুই মিনিট ধরে সাউন্ড টা হচ্ছিল তখন তিনি রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন ছোট ছেলেটি কারেন্টের শক খেয়ে ঝুলে আছে। রান্নাঘরের রেক বেয়ে উঠে হাতের চামচটা সকেট এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ফলাফলে কারেন্ট শক বেশ কিছুক্ষণ ধরে এবং বাচ্চাটির মৃত্যু। 😓
বাবা মা হিসেবে সন্তানদের ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা যেমন মেনে চলা উচিত ঠিক তেমনি ভাবে চেষ্টা করা উচিত যাতে ওদের স্বাভাবিক শৈশব কোনভাবে ব্যাহত না হয়।
সব শিশুদের জন্য ভালোবাসা। ❤️❤️❤️❤️