প্রতিটি মেয়েই জন্ম থেকেই অনেক মায়াবতী। সেটা বোঝা যায় যখন তারা খুব ছোট থেকেই তাদের পুতুলের মা হয়ে যায়, পুতুলকে খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়। এই মায়ার অংশ হিসেবে কোন কিছুকে বা কাউকে তারা আদর যত্ন করতে খুব ভালবাসে।
আমার বেলায় আমার ছোট বোনটি ছিল আমার জ্যান্ত পুতুল। আদরের ভান্ডার আমাদের। বিয়ের পর খালি বাসায় এই আদরের জিনিস এর অভাব পূরণ করতে নিয়ে এলাম টোনা টুনিকে।(এক জোড়া খরগোশ)
এরপর মনে হলো আরো আদরের কিছু দরকার। নিয়ে এলাম তিনটি বিড়াল ছানা, কুইন, টাইগার আর রাজা।
নায়রাহ আসার অসুস্থতায় সব গুলো কে দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর এক এক করে তিনটি আদরের খনি এলো, আলহামদুলিল্লাহ। একা হাতে তাদের সামলাতে হয়। (তাদের বাবা ও টুকটাক সাহায্য করে)। অনেক কিছু মনে মতো করা যায়না। কাজকর্ম অসম্পূর্ণ থাকে। মাঝে মাঝে হিমসিম খাই। বিরক্ত লাগে।
নমুনা: দুপুরবেলা গোসলের পর নুবাঈদ ক্রমাগত হাই তুলতে থাকে। তখন ঝড়ো গতিতে আমার কাজকর্ম চলে। এই অবস্থায় সবকিছু বন্ধ রেখে তাকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য কোলে নিয়ে শুই। বাপ একটু ঘুমা। আমিও কাজে যাই। ওমা, সে সার্ভিস নেয়া শেষ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, হাসাহাসি করে , পর্দা ধরে ঝাকাঝাকি করে , তখন আর ঘুমায় না। মাঝখান থেকে আমার গুরুত্বপূর্ণ তিরিশ মিনিট নাই হয়ে যায়। সব কাজে দেরী হয়ে যায়।
সন্ধ্যার পর নায়রাহ, নাওঈদকে নিয়ে একটু পড়াতে বসার চেষ্টা করি। ছোট পুত্র তখন কম্পিউটারের তার ধরে টানাটানি করার চেষ্টা করে, রান্না ঘরে চলে যায় , ফিল্টারের পানি ছেড়ে দিবে, চুলার বাটন ঘোরানো শুরু করবে. বিছানা বেয়ে পড়ার টেবিলে উঠে যাবে।….. এক দুই পা হেঁটে বাকিটা হামাগুড়ি দিয়ে এ ধরনের কর্মগুলি চালাতে থাকে। তখন মনে হয় কিসের হোমস্কুলিং আর কিসের আরলী চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্ট!!! সব বন্ধ করে ছোট জনকে পাহারা দেই। ( যারা এতো কাজের মাঝেও সব সন্তানদের সময় দিতে পারেন তাদের আমার সুপার ওমেন মনে হয়। আল্লাহ আমাদের মায়েদের সময়ের বারাকাহ দিক)
অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সময় সুযোগ পেলেই রুমে ঢুকে যায় , বইটা নিয়ে ছিড়ে ফেলে, চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে বুবু ভাষায় কথাবার্তা বলতে থাকে।
আরো আরো অনেক ঘটনা। এতো কাজ, এতো ক্লান্তি, এত্তো কিছুর পরও তাদের জন্য আমাদের মায়েদের কতো মায়া লাগে। তাদের হাসিমুখ দেখলে নিমিষেই সব ক্লান্তি চলে যায়। বাচ্চারা একটু একটু বড় হয়, স্বাবলম্বী হয় আর মায়ের কোল থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।( চার বছর বয়সী বড় পুত্রকে অনুরোধ করে আদর করা লাগে। ওর নাকি লজ্জা লাগে!!!) তবু ও মায়েদের বুক ভরা ভালোবাসা, মায়া কোনটাই কমে না।
মেয়েদের মধ্যে সব সময় মাতৃত্ব ভাব প্রবল ভাবে থাকে। ছয় বছর বয়সী মেয়েকে দেখি সে তা সাধ্যমতো ভাইদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করে। ঘর গোছায়। নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করে, যাতে তার মায়ের কাজ সহজ হয় ( বারাকাল্লাহু ফিকুমা)।
অনেকের ক্ষেত্রে এই মাতৃত্ব হলো পরাধীনতার শৃঙ্খল, ক্যারিয়ারের জন্য বাধা। তাদের কথা আলাদা। কিন্তু আর দশটা সাধারণ মেয়েদের জন্য মাতৃত্বের আকাংখা, মায়া খুব স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত বিষয়। তারা ছোটবেলায় পুতুলকে আদর করে, বিড়ালকে আদর কর, বড় হলে ছেলে মেয়ে, বুড়ো হল নাতি নাতি নাতনি, নিঃসঙ্গ হলে পোষা প্রাণী বা অন্য কোন আপনজন, কাউকে না কাউকে সে আদর করবেই, মায়া দেখাবেই। আল্লাহ মেয়েদের হৃদয় ভর্তি করে মায়া দিয়েছেন।
তাই এই মায়াময় সময়ের লোভে তারা যুগে যুগে কালে কালে অনেক কষ্টকর, অপছন্দনীয় বিষয়ের সাথে আপোষ করে যায়।
জগতের সব মায়াবতী দের অনেক অনেক ভালোবাসা।❤️❤️❤️❤️
মায়াবতী মা
by
Tags: