নুবু কান্ড

দুপুরবেলা ওয়াশিং মেশিন থেকে কাপড় বের করে দেখি সবগুলো কাপড় সাদা সাদা কি দিয়ে যেন মাখামাখি হয়ে আছে। কাপড় গুলো ভালো করে তুলে দেখি অনেক গুলো ভেজা কাগজের টুকরা। নুবাঈদের হার্ডবুক সেটের একটা বই সে মেশিনে কোন এক ফাঁকে দিয়ে দিয়েছে। সাধারণত মেশিনের ঢাকনা তুলে এটা সেটা দিয়ে দেয়। কিন্তু মেশিন চলাকালীন সময়ে আজ কোন এক ফাঁকে সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এত কষ্ট লাগছে দেখতে।

তার আশেপাশে কোন বই রাখা যায় না। আমার অথবা ভাই-বোনের বই-খাতা যেটাই হাতের কাছে পায়, ছিড়ে ফেলে। তার নিজের গুলো ছেঁড়া যায়না, তাই সেগুলোর প্রতি আগ্রহ কম।
হাতের নাগালে কলম, পেন্সিল, মার্কার, রং যাই পাবে, দেয়ালে আঁকা আকি করে ভরিয়ে ফেলেছে। তার অত্যাচারে বাসায় কলম, পেন্সিল, মার্কার দরকার মতো কোন কিছুই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। বই খাতা নিয়ে বসতে পারি না অনেকদিন হলো। মোবাইলে টুকটাক পড়ালেখার কাজ, অফিসে র কাজ চালাতে হয়। মোবাইলটা হাতের নাগালে পেলে দেয় তুলে একটা আছাড়। মোবাইলের স্ক্রিনটা অলরেডি ফেটে চৌচির হয়ে আছে।

বারান্দা দিয়ে হাতের কাছে যা পায়, টুপটাপ ফেলে দেয়। কাপড়ের ক্লিপ অর্ধেক ফেলে দিসে মনে হয়!!


কয়দিন আগে প্রায় নতুন এক কৌটা ট্যালকম পাউডার খালি করে ফেলেছে। কসমেটিক সামগ্রী গুলা নিজেরাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি না, তার হাতের নাগালের বাহিরে রাখতে রাখতে। ড্রেসিং টেবিল পুরাটাই খালি পড়ে থাকে। আলমারির উপরে , চিপাচাপায় জিনিস পত্র রাখতে রাখতে অনেক কিছু হারিয়েও ফেলেছি। ভুলভাবে কোনক্রমে তার হাতের নাগালে কিছু গেলে, সেটা শেষ।

ফ্রিজের দরজা দিনে-রাতে মোটামুটি পনের বিশ বার খুলবে আর লাগাবে। চোখের আড়াল হলেই সে দৌড়ে ফ্রিজের দরজা খুলবে এবং ভেতরের জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করে ফেলে দিবে। শেষ পর্যন্ত রশি দিয়ে দরজাটা বেঁধে রাখি। নিজেরো ব্যবহার করতে অসুবিধা হয় এখন। ডিপ ফ্রিজের চাবি ঘোরায় ইচ্ছামতো। কখন জিরো দেয়, কখন মিড বা হাই দিয়ে রাখে টের ও পাইনা।

পানির ফিল্টার উঁচুতে রেখেছি। সে টুলে দাঁড়িয়ে ফিল্টারের পানি ছেড়ে দেয়। অটো চুলা ধুম করে বাড়িয়ে দেয়।

মন মেজাজ খারাপ থাকলে চড়, থাপ্পড়, খামচি চলে (আমার উপর)। নতুবা মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে। নামযের সামনে শুয়ে বসে থাকবে, হিজাবের ভেতর ঢুকে থাকে। পুরা একটা এটেনশন সিকার। সবাইকে তটস্থ রাখে।

এভাবেই বুঝি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে স্বৈরশাসন চলে।


Posted

in

by

Tags: