পিতা-কন্যা

আম্মু প্রায় একটা শ্লোক বলতো,
চোখ ব্যাটা হারামজাদা/
মার দিকে চায়।
বলতো, মেয়েদের সব সময় নিজেদেরকে প্রপার পর্দার সাথে থাকতে হবে। আরও বলতো, নিজের বাবা ভাইয়ের সামনে সব সময় ভালো করে কাপড় গায়ে রাখতে হয়। ছোটবেলায় যখন সিনেমাতে দেখতাম, বাবাকে মেয়েরা ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে, নিজে নিজেই ভাবতাম আমি কি বাবাকে কম ভালোবাসি, নাকি আব্বু কম ভালোবাসে?? আমরা জড়াজড়ি করি না কেন? নাটক সিনেমায় সব জায়গায় মেয়েরা তাদের ভাইকে, বাবাকে অবলীলায় শুধু জড়িয়ে ধরে। আমার কেন জড়িয়ে ধরতে এত বাধো বাধো লাগে অথবা আমরা কেন এই জড়িয়ে ধরা কালচার পরিবারের মধ্যে দেখি নাই?? বড় হতে হতে আস্তে আস্তে এসব প্রশ্নের জবাব খুজে পেয়েছি।

আমার বাচ্চাদেরকে মোটামুটি একা হাতেই লালন-পালন করতে হয়েছে। মেয়ে হওয়ার পর যখন মাঝে মাঝে তার বাবা তার ডায়াপার পরিয়ে দিতো, আম্মু দেখলে বেশ বিরক্ত হতো। বলতো তোর আব্বুকে দিয়ে জীবনে কোনদিন তোদের প্যান্ট ও পরাতে দেইনি। তোরা কেন বাচ্চাদের বাবাকে দিয়ে পটি পরিষ্কার করাস?? অবাক হয়ে চিন্তা করতাম, মেয়ের নিজের বাবা, অসুবিধা কি??

সময়ে সময়ে পেপার পত্রিকায় অনেক খবর পড়েছি। ভাই বোন সম্পর্ক, মামা ভাগ্নি, চাচা ভাতিজি, নানা /দাদা -নাতনি, এখন বাবা- মেয়ে। এই ধরনের ধর্ষণের, নির্যাতনের ঘটনা গুলো এখনকার সময়ে নতুন হচ্ছে , বিষয়টা এমন না । সবসময় হয়ে আসছে। আগে হয়তো আমরা এত খবর পেতাম না । এখন খবরগুলো প্রকাশিত হয়।

এত ভীতিকর খবর গুলো যখন দেখি তখন আমি নিয়মিত দোয়া করি, পৃথিবীর সমস্ত মেয়েরা যাতে নিরাপদে থাকে। এই বিষয়ের জন্য আলাদা করে বিশেষ ভাবে দোয়া করি। মেয়ে বাচ্চা ছেলে বাচ্চা কারো কাছেই নিরাপদ না।

আপুরা, আপনারা বাচ্চাদের ব্যাপারে প্রচুর সর্তকতা অবলম্বন করার চেষ্টা করবেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরটি তে দেখা গিয়েছে মেয়ে দুটির মা যখন বাসার বাইরে কাজে যেত, তখনই তাদের বাবা মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে। আমরা যারা কর্মজীবী মা, প্লিজ প্লিজ বাচ্চাদের ব্যাপারে অনেক অনেক বেশি সর্তকতা অবলম্বন করার চেষ্টা করবেন। বাচ্চা যেখানে থাকবে সেখানে সিসি ক্যামেরা সহ যত ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির সবকিছু লাগানোর ব্যবস্থা করা, বাচ্চার দেখাশোনার জন্য অবশ্যই দাদি ,নানি ,খালা, বোন এ ধরনের মানুষের ব্যবস্থা করা। আমাদের একটুখানি অসতর্কতার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের যদি কোন কিছু হয়ে যায় তাহলে নিজেদেরকে সারা জীবনের জন্য ক্ষমা করাটাই কষ্ট হয়ে যাবে। তাই কোন কিছু হবার আগেই সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী।
এছাড়া আরো একটা বিষয় আমার খুব মনে হয় সেটা হল বাচ্চা যখন খুব ছোট থাকে তখন হয় বাচ্চাকে ডায়াপার পরিয়ে রাখা উচিত অথবা ন্যাপি বা প্যান্ট পরিয়ে রাখা উচিত। বাচ্চা ঘন ঘন প্রস্রাব করে, এই জন্য অনেকে বাচ্চাকে নিয়মিত ন্যাংটু রেখে দেয়। এটা বাচ্চার কাছে থাকা তার আপন জন দের মধ্যে অনেক বিকৃত কামনার উদ্রেক ঘটায়। তাই বাচ্চাদেরকে কখনোই খালি রাখবেন না। প্যারেন্টিং গ্রুপ গুলোতে অনেক ঘটনা শোনা যায় যে, বাচ্চার লজ্জাস্থান ধরে মুরুব্বি মানুষ জন খেলা করে। মা দেখেও কিছু বলতে পারেনা।

তখন এই বিষয়টাই মনে হয়েছে যে বাচ্চাকে নেংটু রাখলে এই ধরনের বাজে ঘটনা যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে।

বোনেরা আমার , নিজেদের ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকার চেষ্টা করবেন ঠিক তেমনিভাবে নিজের ছেলে মেয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করবেন। এরপর আল্লাহ ভরসা। প্রতিনিয়ত তাদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করে যেতে হবে।

ছোটবেলায় আম্মু সব সময় দোয়া করত বাচ্চারা যাতে মান সম্মানের সাথে বড় হতে পারে। তখন বুঝতে পারতাম না এটা কেমন দোয়া? বড় তো বাচ্চারা এমনি এমনি হয়। মান ইজ্জত এর সাথে বড় হওয়া- এটা কেন আলাদা করে দোয়া করতে হবে? এখন খুব ভাল করে বুঝি যে মা-বাবার দোয়া ছেলে-মেয়েদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লাহ পৃথিবীর সমস্ত বাচ্চাদেরকে হিংস্র পুরুষদের হাত থেকে নিরাপদে রাখুক।

খবর লিংক কমেন্টে।

https://m.mzamin.com/article.php?mzamin=288627


Posted

in

by

Tags: