//সন্তানদের বিয়ে ভাবনা//



ছেলে মেয়েরা যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, তখন বন্ধুবান্ধব, টিভি, নাটক, সিনেমা এবং চারপাশ দেখে আস্তে আস্তে তাদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হতে থাকে। একসাথে পড়াশোনা করার সুবাদে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের ক্রাশ, ভাললাগা এগুলো তৈরি হয়। যেহেতু তাদের বিয়ে (সামাজিক সম্পর্ক) হতে অনেক সময় লেগে যায়, প্রায় পঁচিশ ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, সেক্ষেত্রে তাদের যে স্বাভাবিক চাহিদা সেটা মেটাতে তারা প্রেম-ভালোবাসা সহ আরো যা যা করা দরকার সব করতে থাকে। বড়লোক, মধ্যবিত্ত, গরিব সব শ্রেণীতে এই চাহিদাটা একই রকম।

আজ সকালে বুয়ার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানতে পারলাম , খুব কম বয়সে (১৩/১৪) তার সম্পর্ক করে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আগে দুই/তিন বছরের সম্পর্ক। শ্বশুরবাড়িতে বিষয়টা মেনে নেয়নি। ছেলে এত কম বয়সে কেন বিয়ে করবে (১৮/১৯)?? বোনদেরকে বিয়ে দিবে, ঘরবাড়ি করবে, ৩৫-৪০ বছর হলে না হয় বিয়ে করবে!!। তাই ছেলেটি যখন বউকে নিয়ে তার বাড়িতে গেল, নববধূকে চুলের মুঠি ধরে ঘর থেকে টেনে বের করে দিয়েছিল ছেলের বড় বোন।😓
বিয়ের মত একটা সম্পর্ককে মেনে নিতে আমাদের কত কষ্ট। কিন্তু বিয়ের আগে দুই, চার, দশ বছর প্রেম পিরিতি, ভালোবাসা করতে থাকো। এটা নিয়ে কারো কোন সমস্যা নাই।

আবার ভাব ভালোবাসা করে বিয়ে করেছে, এমন মেয়েকে সম্মান করার, আদর করার কোন মানেই হয়না। মেয়ে যতই তার নিজের শ্রমের টাকা দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে খরচ করুক, পরিবারে সব সময় দিক, তারপরও কখনই তারা সন্তুষ্ট হয় না। বরং যদিও অর্থ সামর্থ্য দিক থেকে, সৌন্দর্যের দিক থেকে মেয়েটি কোন অংশে ছেলের চাইতে কম না। তবুও সম্পর্কের বিয়ে হলে শ্বশুরবাড়িতে কোনরকম মূল্যায়ন করা যাবে না। বরং মারাত্মক রকমের নির্যাতন সইতে হচ্ছে এবং হয়েছে।।

জিজ্ঞাসা করলাম এত অল্প বয়সে সম্পর্ক করার কারণ কি ছিল? খামাখা শ্বশুরবাড়ি তো সম্মান পাচ্ছেন না, শ্বশুরবাড়ির কারণে জামাই ও নির্যাতন করতো!!! জামাইয়ের আয় অপর্যাপ্ত হওয়ায়, তাকে আবার মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করতে হয়। এরকম সম্পর্ক করে ফায়দাটা কি হইলো?

বলল, টিভি- সিনেমাতে প্রেম- পিরিতি, ভাব- ভালোবাসা দেখেছি, আশেপাশের বন্ধু-বান্ধবীরা ও করেছে। তাই সেও করেছে। এখন যত অত্যাচার-নির্যাতনই হোক না কেন, এখানেই ঘর সংসার করতে হবে। নিজে মানুষের বাসায় কাজ করছে, প্রয়োজন পড়লে বাপের বাড়ি থেকে টাকা পয়সায় এনে সংসার চালাচ্ছে। তবু ও এভাবেই টিকে থাকতে হবে।
এই চিত্রটি অনেকের কাছে পরিচিত বলে মনে হচ্ছে না??

এইসব কারণে দেখা যায়, সম্পর্কে থাকার পরেও অনেকেই পরিবারের কাছে তথ্য গোপন করে, অনেকেই বলে এরেঞ্জ মেরেজ, অনেকেই বিষয়টা লুকাতে চায়। কেননা বিবাহ বহির্ভূত ভালবাসার মধ্যে একটা হারাম বিষয় জড়িত আছে এবং কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই এসব সম্পর্ক কারোটা টিকে, কারোটা টিকেনা। কারো সম্পর্ক সময়ে-অসময়ে পরিবর্তিত হতে থাকে।

যদিও এখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবার থেকেই হয়তো বলে দেওয়া হয়, বুঝে শুনে সম্পর্ক করলে সেখানে বিয়ে-শাদী দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তবুও বিয়েকে সহজ করা হয় না।

মেয়েদের ১৪-১৮ বছর , ছেলেদের ১৮-২২ বছর বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। এই সময়ে নানান রকমের ভুল পথে পা দেয়, আবেগে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় এবং অনেকে আজীবনের জন্য ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।
আজই একজনের কথা শুনলাম ১৬ বছর বয়সী, যে তার ( বিবাহিত এবং দুই বাচ্চার জন্ক) গৃহ শিক্ষকের সাথে পালিয়ে গিয়ে হোটেলে দুই রাত থেকে আবার বাপ মায়ের কাছে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

অবস্থাদৃষ্টে যেটা মনে হল, ছেলেমেয়েদেরকে ভালো করে বোঝা উচিত। যদি মনে হয় তারা বিয়ে করতে চাইছে তবে তাদেরকে মা-বাবার সাহায্য করা উচিত। কোনরকম অঘটন ঘটার আগে মা-বাবার উচিত তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

মেয়েদের ক্ষেত্রে সম্পর্ক করে বিয়ে শাদী করলে শ্বশুরবাড়িতে খুব একটা সম্মান পাওয়া যায় না। জান দিয়ে ফেললেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাজে কথা, বাজে ব্যবহার করতে ছাড়ে না। যতই সুন্দর, জ্ঞানীগুণী, শিক্ষা-দীক্ষায়, বংশ মর্যাদায় অতুলনীয় হোক না কেন।
(অনেক ভাগ্যবান, ভাগ্যবতী আছে যারা নিজের পছন্দের বিয়েতেও অনেক ভালো আছে শ্বশুরবাড়ির সম্মান নিয়ে। আবার অনেক পারিবারিক বিয়ের মধ্যেও অনেক অশান্তি আছে। এগুলো ব্যতিক্রম)

দেখা যাবে আজ থেকে দশ পনের বছর পর ছেলে মেয়েরা নিজেদের জন্য জীবন সাথী হিসেবে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বেছে নিলেই বরং আমরা নিশ্চিন্তে থাকবো। যে হারে মেন্টাল এবং সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার ভুগছে এখনকার জেনারেশন!! সেটা বিবেচনা করলে ভালোয় ভালোয় ১৮-২০ বছরের মধ্যে ছেলে মেয়েদেরকে বিয়ে শাদী দিতে পারলে নিশ্চিন্ত বোধ করব বলে মনে হচ্ছে।

প্রেম- ভালোবাসা সহজ না করে, বিয়েকে সহজ করা উচিত।


Posted

in

by

Tags: