সময়টা ২০১৭ সাল। বান্ধবী Afifa Raihana কানাডা যাবার পর তখন প্রথমবারের মতো দেশে বেড়াতে আসলো। মাতৃত্ব সাইটে তখন টুকটাক লেখালেখি করি আমরা। সে তখন বলছিল গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের জন্য প্রিনাটাল ক্লাসের গুরুত্ব কতখানি। এই ক্লাসগুলোতে হবু মাকে নানা ধরনের বিষয় সম্পর্কে জানানো হয়। নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপের পাশাপাশি এই প্রিনাটাল ক্লাস একজন মায়ের জন্য কতটা কাজের সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছিলো আফিফা। এই ক্লাস করে সে কি কি জেনেছে, গর্ভকালীন সময়ে কেমন উপকার পেয়েছে সেগুলোও আমাকে বলল। কারণ আফিফা বাংলাদেশে এই প্রিনাটাল ক্লাস চালু করতে চায়। সেই সময় প্রথমবারের মতো আমি এই ক্লাস সম্পর্কে জেনেছি।
নিজস্ব ব্যস্ততা, পারিপার্শ্বিকতা সবকিছু মিলিয়ে মাতৃত্ব থেকে এই কোর্স চালু করতে করতে ২০২২ হয়ে গেল। এখন আফিফা রায়হানা একজন সার্টিফায়েড আমানি চাইল্ড বার্থ এডুকেটর। তার সাথে ডাক্তার Sabrina Afroz ও পুষ্টিবিদ Lubyna Kayes মাতৃত্ব পাঠশালা থেকে এ ক্লাসগুলো করাবেন। পুরো বিষয়টা নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী, কারণ দেরিতে হলেও আমরা শুরু করতে যাচ্ছি এবং মাতৃত্ব সাইটের মতো এই কোর্স চলমান থাকবে ইনশা আল্লাহ।
ওভারঅল উদ্যোগ হিসেবে মাতৃত্ব ও এই প্রিনাটাল কোর্সের প্রতি আমার কমিটমেন্টের পেছনে রয়েছে নিজের গল্প। আমার ৩টা প্রেগনেন্সি পার হয়ে যখন আমি পেছনে তাকাই, সেখানে অনেক অপূর্ণতা, অসহায়তা দেখি। গড়পড়তা বাংলাদেশি যেকোন গর্ভবতী মায়ের মতো আমিও নিয়মিত বিরতিতে ডাক্তার দেখাতাম। ডাক্তার চেক করে প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লিখে দিতেন। কী অবস্থা, কেন এই ঔষধ এসব বলার সময় কই ডাক্তারের! শরীরের রোগশোক নিয়ে চিন্তিত ডাক্তারের কোন সময় নেই রোগীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানার বা বোঝার!দেশের বাস্তবতায় এগুলা আশা করাও বোকামি। কারণ ডাক্তার ও রোগীর অনুপাত।তাহলে সমাধান কোন পথে?
আফিফা ও আমি মনে করি, গর্ভবতীকেই নিজের বিষয়ে জানতে হবে, গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে সচেতন হতে হবে। একই সাথে তার পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে স্বামী, যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে মাতৃত্বকালীন সময়টা যেকোন মায়ের জন্য আনন্দময় হতে পারে। এই সমাধানের একটা অংশ এই মাতৃত্ব কমিউনিটি, যেখানে মা, ডাক্তার, অভিজ্ঞ কেয়ারগিভাররা সবাই সবার প্রশ্নের উত্তর দেন, পরামর্শ দেন।আরেকটা অংশ হলো মাতৃত্বকালীন গোছানো পড়াশোনা, যেটা সম্ভব হবে মাতৃত্ব প্রি-নাটাল ক্লাস থেকে। এবং এখানেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে না। আমার হাজব্যান্ডের মতে আধুনিক প্রযুক্তির সুফলকে কাজে লাগিয়ে মাতৃত্ব’কে স্মুদ করার কোন উদ্যোগ আমাদের দেশে নেই। হয়তো আমাদের কমিউনিটির কেউ এমন কোন উদ্যোগ নিয়ে আসবেন।বর্তমানে পুরো মাতৃত্ব টীম ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে প্রিনাটাল ক্লাস চালু করা নিয়ে। আমরা আশা করবো আমাদের কমিউনিটি আমাদের এই উদ্যোগের পাশে থাকবেন – উদ্যোগের অংশ হয়ে, পরামর্শ বা দোআ দিয়ে। উপকারি জ্ঞানে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুক আমাদের মায়েরা ❤️