বড় সন্তান

প্রতিদিন অফিস থেকে এসে সোজা রান্নাঘরে ঢুকি। দুপুর দুইটার মধ্যে টেবিলে খাবার দিয়ে দেই। বাচ্চারা খেতে খেতে নিজের অন্যান্য কাজ সেরে, খেয়ে নুবাঈদকে নিয়ে সোজা বিছানায়। ওকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে আমারও একটা ভালো ঘুম হয়ে যায় প্রচন্ড ক্লান্তিতে।

এর মাঝে কোন কোন দিন নায়রাহ এসে পা ধরে ঝাকিয়ে ঘুমের বারোটা বাজায়। নিচে খেলতে যাবে। ওর চুল বেঁধে দিতে হবে। দিনের পর দিন একই ঘটনা। কাঁচা ঘুম থেকে যখনি সে ডেকে তোলে, মন চায় কি যে করি তখন😡😡।

বলি চুলে ব্যান্ড পরে যাও। চুল ছেড়ে যাও অথবা একদম চুল কেটে দিই। সেটাতেও সে রাজি না। পৌনে সাত বছরে দুইবার মাত্র ন্যাড়া হয়েছে। এখন চুল ও কাটতে দেয় না। অনেক বোঝানোর পর এখন নিজে নিজে চুল বাধে। সকালে স্কুলে যাবার সময় হলে নিজেই এলোমেলো করে কোনরকমে চুল বেঁধে নেয়, আমার দু মিনিট সময় বাঁচে।

টুকটাক এটা সেটা বিভিন্ন কাজ ওকে দিয়ে করাই। বুঝিয়ে বলি করতে করতে শিখবে, ভুল হলে অসুবিধা নেই।

মাঝে মাঝে ওর জায়গা থেকে ওর অবস্থা বুঝার চেষ্টা করি ‌। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। কিন্তু আসলে তো তার বয়স অনেক কম। তার কাছ থেকে ম্যাচিওরড আচরণ সারাক্ষণ আশা করাটা খুবই বোকামি। তবুও এটা-সেটা নির্দেশনা দেই। ও মাঝে মাঝে শোনে, মাঝে মাঝে শোনে না।

পরিবারের বড় সন্তান হলে হলে বয়স যতই হোক না কেন দায়িত্ব সব সময় যেন বেশি থাকে। পরিবারের ছোট হলে প্রায় কোন দায়িত্ব নেয়া ছাড়া জীবন পার করে দিতে চেষ্টা করে(সবার জন্য প্রযোজ্য নয়)।

আমাদের ছানাপোনার বেলায় আমরা খুব চেষ্টা করি , বড় জনকে বড় হিসেবে মাথায় বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। ছোট জনকে আহ্লাদ করে ন্যাকা বানানো যাবেনা।

তাই বকাঝকা, পিট্টি শাসন যাই করি না কেন, মনে করে দিন শেষে ওদের (বড় দুজন) জড়িয়ে ধরে আদর করে দেই। আদর করে কানে কানে বলে দেই, ‘মাম্মাম লাভ ইউ’। যতবার ওরা শোনে, ততবার একটা লাজুক হাসি দেয়।
বারাকাল্লাহু আলাইনা।

ছোট পুত্র সারাদিন আদরে ভাসতে থাকে। মা-বাপ, ভাই-বোন সহ সবার কোলে তো থাকেই, পারলে টুইংকেলের কোলে উঠে বসে থাকে।🥰 বড় দুজন যাতে বঞ্চিত বোধ না করে সেজন্য তাদের বাবা এবং আমি নিয়ম করে ওদেরকে আদর করে দেই। আলহামদুলিল্লাহ। এজন্য ওরা ছোট ভাইয়ের প্রতি খুব একটা ঈর্ষা বোধ করে না। আর অতি আদরে আহ্লাদিত নুবাঈদ, তার ভাই-বোন কেউ যদি মা বাবার কোলে উঠে , সে জান দিয়ে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।

তার বেশি আহ্লাদ আবার টুইংকেল সহ্য করতে পারে না। তাই নুবাঈদের কোলে এখন টুইংকেল ভাগ বসায়।

দিনশেষে বড় সন্তান ছোট সন্তান হিসেবে ট্রিট না করে সবাইকে সমানভাবে দেখার চেষ্টা করি। যাতে করে ওদের মনে না হয়, আমি বড় বলে আমাকে বেশি কাজ করতে হয়েছে, তারা ছোট বলে পায়ের উপর পা তুলে থেকেছে।

সব বাবা-মা সন্তানদের অনেক ভালোবাসে। কিন্তু অনেকে প্রকাশভঙ্গিতে ভালোবাসাটা সন্তানের প্রতি খুব একটা বোঝা যায় না।সন্তানরা যদি মা বাবার ভালোবাসা বুঝতে না পারে তখনি দূরত্ব তৈরি হয়।সন্তানের সাথে মা-বাবার সম্পর্কটা হবে সবচাইতে সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। যেকোনো সমস্যাতে, যে কোন আনন্দের সময়, যেকোন বিপদে সবার আগে যাতে তারা মা বাবার কাছে সেটা বলতে পারে।

আমরা আমাদের রাগ ও জেদের কারণে সন্তানদের সাথে সম্পর্কের ওই জায়গাটা যাতে নষ্ট না করে দেই। ছোট সন্তানের জন্য বড় জনকে আদর করা যাতে কমিয়ে না দেই।…….